বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সরকারি লোকসানি প্রতিষ্ঠানের ধারণা পাল্টে দিয়েছে প্রগতি

২০২০-২১ অর্থ বছরে মুনাফা ৫ কোটি ৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সরকারি লোকসানি প্রতিষ্ঠানের ধারণা পাল্টে দিয়েছে প্রগতি

বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান মানেই ‘লোকসানি’ এ ধারাকে পাল্টে দিয়েছে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (পিআইএল)। গত পাঁচ দশক ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি দেশের অটোমোবাইল শিল্পে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের পথ অনুসরণ করেই গত এক দশকে দেশেই অটোমোবাইল খাতের একাধিক বড় বিনিয়োগ শুরু করেছে বেসরকারি উদ্যোক্তারা। 

প্রগতির চেয়ারম্যান মো. শহীদুল হক ভূঁঞা বলেন, ‘প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে দেশে গাড়ি সংযোজন খাতে অবদান রেখে চলেছে। দেশের অটোমোবাইল খাতের উন্নয়নে প্রগতি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ নিজস্ব ব্র্যান্ডের গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। প্রগতির দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও দেশের বিদ্যমান চাহিদার প্রেক্ষিতে দেশে গাড়ি নির্মাণ শিল্পের ভিত তৈরি করেছে।’

জানা যায়, ইংল্যান্ডের জেনারেল মোটরসের কারিগরি সহযোগিতায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার বাড়বকুন্ডে ১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু হয় গান্ধারা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতের অকৃত্রিম স্পর্শে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (পিআইএল) নামে জাতীয়করণ করা হয়। এটি বাংলাদেশে গাড়ি সংযোজনকারী একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতা উত্তরকালে ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড কোম্পানির বাস ও ট্রাক সংযোজন করার মাধ্যমে পিআইএল আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। পরে জাপানের মিৎসুবিসি, নিশান ও ইসুজুসহ ভারত, চীন, কোরিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ির সিকেডি যন্ত্রাংশ আমদানি করে সংযোজন ও বাজারজাত করে। বর্তমানে জাপানের মিৎসুবিসি মোটরস করপোরেশনের পাজেরো স্পোর্টস (কিউএক্স) জিপ, মিৎসুবিসিএল-২০০ ডাবল কেবিন পিকআপ; চীনের ফোর্ডে অটোমোবাইলস কোম্পানি লিমিটেডের ল্যান্ডফোর্ট এসইউভি জিপ, লায়ন এফ-২২ ডাবল কেবিন পিকআপের সিকেডি আমদানি ও সংযোজনপূর্বক স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করছে। পিআইএল টয়োটা অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ইত্যাদি সিবিইউ অবস্থায় আমদানি করেও বাজারজাত করছে। এতে দেশের  বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ স্বল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের গাড়ির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে মুনাফা অর্জন করে সরকারি কোষাগারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ জমা প্রদানের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সংযোজন সক্ষমতা ১৩০০ ইউনিট গাড়ি। যার বিপরীতে প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার গাড়ি স্থানীয়ভাবে সংযোজন করে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরবরাহ করে আসছে। ধারাবাহিকভাবে উল্লেখযোগ্য হারে লাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা সরকারকে রাজস্ব প্রদান করে থাকে। এ ছাড়া ২০১৬-১৭ সালে কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে ৫৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ সালে মুনাফা করেছে ৬২ কোটি ৭ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মুনাফা করেছে ৬৫ কোটি ৮৬ লাখ, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৫১ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং করোনাকালীন সংকট সত্ত্বেও ২০২০-২১ অর্থবছরে মুনাফা করেছে ৫ কোটি ৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।

সর্বশেষ খবর