বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সম্ভাবনাময় ভৈরবের পাদুকাশিল্প

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, ভৈরব থেকে ফিরে

সম্ভাবনাময় ভৈরবের পাদুকাশিল্প

মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীনতম বাণিজ্য নগরী কিশোরগঞ্জের ভৈরব। এখানে অনেকটা নীরবে-নিভৃতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অন্তত ১০ হাজার পাদুকা কারখানা। ভৈরব শহর ও আশপাশ এলাকায় প্রতিটি ঘরে রয়েছে সম্ভাবনাময় এ শিল্প। এসব কারখানাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পাদুকাশিল্প-সংশ্লিষ্ট শত শত কাঁচামালের দোকান। ভৈরব এখন পাদুকা     নগরী। এ খাতকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান। বাণিজ্যিক সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে ভৈরবের এ পাদুকাশিল্প। এখানকার পাদুকাশিল্প থেকে প্রতি বছর আয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভৈরবের এই সম্ভাবনাময় পাদুকাশিল্প দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করে আয় হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন পাদুকা শ্রমিকরা। উৎপাদিত এসব পাদুকা পাইকারি দামে কিনতে প্রতিদিন ভিড় করেন রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, নরসিংদী, সিলেট, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। তৈরি করা এসব পাদুকার নামও রয়েছে হরেক। বন্দরনগরী ভৈরবে পাদুকাশিল্পের কারখানা যেন দিন দিন পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। উৎপাদিত এসব পাদুকা বিক্রির জন্যই গড়ে উঠেছে পাঁচ শতাধিক পাইকারি দোকান। ভৈরব পৌর এলাকার কমলপুরসহ গজারিয়া, মানিকদী, কালিকাপ্রসাদ, শিমুলকান্দি, বাঁশগাড়ির ২০টি গ্রামে গড়ে উঠেছে এসব কারখানা। এ শিল্প থেকে প্রতি বছর আয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সরকারিভাবে একটু নজর দিলে বিদেশের বাজার দখলে নেওয়া যেন এখন সময়ের ব্যাপার। সরেজমিনে দেখা যায়, ভৈরবের পুরাতন বাজার ও দুর্জয় মোড় থেকে কিশোরগঞ্জগামী সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে শত শত পাদুকা তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় শ্রমিকরা জুতা তৈরিতে ব্যস্ত। কেউ জুতার সোল কাটছেন, কেউ চামড়া কাটছেন। আবার কেউ জুতায় গাম লাগাচ্ছেন। কেউ কেউ নতুন জুতা পলিথিনে ভরে সারিবদ্ধ করে রাখছেন। আবার কেউ কেউ নতুন জুতা পাশের পাইকারি মার্কেটে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কাগজের তৈরি পাদুকা বক্স, কেউ জুতার হিল, কেউ ম্যাটেরিয়ালস, কেউ পাদুকার লেভেল ছাপার সঙ্গে জড়িত। কারখানার পাশেই রয়েছে শত শত কাঁচামালের দোকান। শুধু তা-ই নয়, জুতার লেভেল ছাপার প্রেসও রয়েছে শতাধিক। সড়কের পাশেই রয়েছে বিশালাকৃতির তিনতলা পাইকারি জুতার মার্কেট। নাম মিজান মার্কেট। একটু সামনেই রয়েছে আজিজ সুপার মার্কেট ও বশির মার্কেট। এর প্রতিটিতেই গড়ে তোলা হয়েছে জুতার পাইকারি বাজার। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, মিয়ানমার ও চীনের পাশাপাশি বাজারে ভারতীয় জুতার আধিক্য রয়েছে। বিদেশি জুতাগুলো কম টেকসই হলেও দেখতে চকচকে। আর এ জন্যই দেশি জুতার চেয়ে বিদেশি জুতার দিকে ক্রেতাদের নজর বেশি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ভৈরবের পাদুকাশিল্পে। পাদুকা মালিক সমিতির সম্পাদক মজিবুর রহমান জানান, ভৈরবে এখন পাদুকাশিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা বিদেশি জুতা আমদানি। দেশের এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে বিদেশি জুতা আমদানি বন্ধ করতে হবে। পাদুকাশিল্পকে বাঁচাতে কারখানার মালিকদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর