শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেড় ঘণ্টায় গাজীপুর থেকে কিশোরগঞ্জ

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

দেড় ঘণ্টায় গাজীপুর থেকে কিশোরগঞ্জ

অবশেষে মহাসড়কে উন্নীত হচ্ছে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক। আর এ মহাসড়ক বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে গাজীপুর সড়ক বিভাগ। বাস্তবায়ন হলে ঢাকা থেকে সড়কপথে কিশোরগঞ্জ জেলার দূরত্ব কমে আসবে অন্তত ৬০ কিলোমিটার। আর এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে এ অঞ্চলের মানুষের। রাজধানী ঢাকা থেকে গাজীপুর-মাওনা হয়ে ময়মনসিংহ দিয়ে এবং টঙ্গী থেকে নরসিংদী-ভৈরব হয়ে যেতে হতো কিশোরগঞ্জ।

রাজধানী থেকে সড়কপথে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব কমিয়ে আনতে ২০০৫ সালে কাপাসিয়ার শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর ফকির মজনু শাহ সেতু তৈরি করা হয়। পরে গাজীপুরের সীমান্ত কাপাসিয়ার টোক এলাকা দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে আরেকটি সেতু। আর দুই সেতুর কারণে ঢাকা থেকে সড়কপথে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব কমে আসে প্রায় ৬০ কিলোমিটার। কিন্তু ৪১ কিলোমিটার সরু খানাখন্দে ভরা রাস্তার কারণে ওই সুবিধার বারো আনাই অধরা ছিল কিশোরগঞ্জসহ ওই রুটে চলাচলকারী লাখো মানুষের। আশার কথা হলো, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জের মধ্যে সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর-কাপাসিয়া-টোক-মঠখোলা আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ২৪৫ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরে প্রশস্ত ও মজবুতিকরণে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠায় গাজীপুর সড়ক বিভাগ। যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুততম সময়ে সড়কটির উন্নয়ন করা হলে কিশোরগঞ্জসহ পাশের জেলা ও এলাকার জনসাধারণের জীবনমান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। সরেজমিন দেখা যায়, গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর থেকে কাপাসিয়া হয়ে কিশোরগঞ্জ সড়কটি মাত্র ১৮ ফুট প্রশস্ত। আর এ কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। সড়কটি যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক ও ভারী যানবাহন চলাচলে সম্পূর্ণ অনুপযোগী। অপ্রশস্ততার কারণে একটি গাড়ি সড়কের পাশে থামিয়ে বা গতি কমিয়ে অন্যটিকে সাইড দিতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, এই সড়কের বিভিন্ন এলাকায় মারাত্মক বাঁক রয়েছে। এসব বাঁকের কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা। অন্যদিকে একটু বৃষ্টি হলেই স্থানে স্থানে গর্ত, খানাখান্দের সৃষ্টি হয়। তাত্ক্ষণিকভাবে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে গাজীপুর সড়ক বিভাগ ইট ও খোয়া বিছিয়ে সমস্যার সাময়িক সমাধান করে আসছে। পুনরায় বর্ষা শুরু হলে সড়কটি আর যান চলাচলের উপযোগী থাকবে না বলে যানবাহনের চালক, মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ সড়কে চলাচলকারী জলসিঁড়ি পরিবহনের পরিচালক খন্দকার গোলাম ছামদানী বলেন, এ রুটে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জসহ পাশের এলাকায় ৯টি পরিবহন সার্ভিসের কয়েক শ যাত্রীবাহী বাসসহ আঞ্চলিক বিভিন্ন পরিবহন প্রতিদিনই চলাচল করে। এ ছাড়া মালবাহী গাড়ি তো আছেই। একে সরু রাস্তা, তার ওপর সড়কের বিভিন্ন স্থানে বসে হাট-বাজার। আবার একই সড়কে একই সময় অনুমোদিত ফিটনেসবিহীন ভিন্ন গতির যানবাহন চলাচল করায় যেমন দুর্ঘটার ঝুঁকি বাড়ে তেমনি সময়ও লাগে অনেক বেশি। তিনি এ সড়কের বাঁক কমিয়ে আরও প্রশস্ত করার দাবি জানান। গাজীপুর সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কে বি এম সাদ্দাম হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সালনা (রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা)-কাপাসিয়া-টোক-মঠখোলা সড়কটি গাজীপুর সড়ক বিভাগ ২৪৫ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরে প্রশস্ত ও মজবুতিকরণে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠিয়েছে। কাপাসিয়া-টোক-মঠখোলা ৪১ কিলোমিটার সড়ক ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুট প্রশস্ত করা হবে বলে জানান তিনি। গাজীপুর সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ডি এ কে এম নাহীন রেজা জানান, সালনা-কাপাসিয়া-টোক-মঠখোলা সড়কের রাজেন্দ্রপুর থেকে কাপাসিয়া হয়ে নবীপুর গাইন্দালিয়া ব্রিজ পর্যন্ত সাময়িক মেরামতের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তার কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর থেকে কাপাসিয়া হয়ে কিশোরগঞ্জ সড়ক দিয়ে এখন শত শত যানবাহন যাতায়াত করছে। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ, সিলেট, নরসিংদীসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার সাধারণ মানুষ অল্প সময়ে রাজধানী ঢাকা যেতে এই সড়ক ব্যবহার করছেন। সড়কটুকু অত্যন্ত সরু হলেও চলাচল করছে বড় বড় যাত্রীবাহী গাড়ি। আর এতে এই সড়কে দুর্ঘটনাও বেড়েছে। রাজেন্দ্রপুর থেকে কাপাসিয়া হয়ে কিশোরগঞ্জ সড়ক মহাসড়কে উন্নীত হলে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, সিলেটসহ বৃহত্তর একটি অঞ্চলের মানুষ অল্প সময়ে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর