বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
শেষ হলো না বিশৃঙ্খলা

পরস্পরকে দোষারোপ বিপাকে হজযাত্রীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাতিল হওয়া হজ ফ্লাইটের শ্লটপ্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। ফলে গতকালও ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি করে মোট চারটি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে বিমান বাংলাদেশ ও হজ এজেন্সিগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন ৯ হাজার হজযাত্রী।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ১৫ দিনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদিয়া এয়ারলাইনসের বাতিল হয়েছে ২৩ হজ ফ্লাইট। এসব ফ্লাইটের প্রতিটিতে ৪১৯ জন যাত্রী পরিবহনের কথা ছিল। বিমান ও হজ অফিস সংকট মোকাবিলায় একটি ফ্লাইট রি-শিডিউলিং করে হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রী পাঠাতে সক্ষম হয়। এখনো বাতিল হওয়া ফ্লাইটের প্রায় ৯ হাজার যাত্রী অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। এসবের পাশাপাশি হজ এজেন্সিগুলোর নানা টালবাহানায় প্রায় ৪০ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে। হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) বলছে, নির্ধারিত সময়ে বিমানের টিকিট না পাওয়ায় যাত্রী সংকট শুরু হয়। অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ বলছে, হজ এজেন্সিগুলোর সমন্বয়হীন বাড়ি ভাড়া করার কারণেই মূলত হজ ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। আশকোনা হজ ক্যাম্প ঘুরে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত ৭৮ হাজার হজযাত্রী ভিসা পেয়েছেন। অন্যরাও দু-এক দিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন। হজ ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ই-ভিসা জটিলতা অনেকাংশে কেটে গেছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট সব হজযাত্রীর ভিসা হয়ে যাবে। আমরা হজ এজেন্সি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সঙ্গে সমন্বয় করে সার্বিক কাজ চলমান রেখেছি।’ হাবকে দোষারোপ করে বিমানের এমডির সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে হাব মহাসচিব মো. শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘বিমান হজ এজেন্সিগুলোকে টিকিট সরবরাহে বিলম্ব করেছে। ফলে কৃত্রিম যাত্রী সংকটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ২৭ জুলাই থেকে পুনঃহজে (২০১৫ ও ২০১৬ সালের জন্য) বাড়তি ২০০০ রিয়াল আরোপ করায় ই-ভিসায় নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর জন্য হাব কোনোভাবেই দায়ী নয়। পরে হাবের অনুরোধে হজ এজেন্সিগুলো ২০০০ রিয়াল পরিশোধ করে ভিসা সংগ্রহ করেছে।’ এদিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ হজ ফ্লাইট বিপর্যয়ের জন্য হজ এজেন্সিগুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘হজ এজেন্সিগুলো সময়মতো বাড়ি ভাড়া না করার কারণে ফ্লাইট বিপর্যয় হয়েছে। পরিস্থিতি কোনোভাবেই যাতে আয়ত্তের বাইরে চলে না যায়, তার জন্য আমরা ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছি। চলতি বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৫২ হাজার ৬৮৪ জন সৌদি পৌঁছেছেন। বর্তমানে তারা মক্কা ও মদিনায় অবস্থান করছেন।’

সংবাদ সম্মেলন : চলমান হজ ফ্লাইট-সংক্রান্ত জটিলতাসহ নানা বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিমানের এমডি ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ গতকাল বলেন, ‘হজ এজেন্সিগুলোর অসহযোগিতায় হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। আমরা ১৪টি বাড়তি শ্লটের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সেভাবে শ্লট দেওয়া হয়নি। তাই বাড়তি ১৪টি শ্লটের সর্বোচ্চ ৭টি শ্লট ব্যবহার করতে পারব।’ উড়োজাহাজের টিকিট সিন্ডিকেটের অভিযোগের বিষয়ে বিমান এমডি আরও বলেন, ‘টিকিটের সংগ্রহের বিষয়ে আমরা হজ এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে চাহিদা আহ্বান করার পর ১১৫টি এজেন্সি আবেদন করে। তাদেরই টিকিট দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো জটিলতা নেই। আমরা আশাবাদী শেষ পর্যন্ত সব যাত্রীই হজে যেতে পারবেন।’ এ পর্যন্ত বিমানের ১৯টি ও সৌদি এয়ারলাইনসের ৪টি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে বিমানের ক্যাপাসিটি লস হয়েছে ৯ হাজার ৮৮৭ জন। টাকার অঙ্কে ৪০ কোটি। গতকাল পর্যন্ত ৭০টি হজ ফ্লাইট জেদ্দায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে ২৪ হাজার ১১৫ জন হজযাত্রী পরিবহন করেছি। এখনো আমাদের যে সক্ষমতা আছে তাতে ৫৮ হাজার ৯১৩ জন হজযাত্রী পরিবহন করতে পারব।’

সর্বশেষ খবর