রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস ঘিরে নতুন সম্ভাবনা

কাঞ্চন-১ কূপ খনন আগামী মাসে

জিন্নাতুন নূর

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস ঘিরে নতুন সম্ভাবনা

বাংলাদেশের মূল্যবান জ্বালানি বা প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসার খবরটি পুরনো। আর সাগরে নতুন করে জ্বালানি (তেল-গ্যাস) অনুসন্ধান কার্যক্রমটিও বেশ ব্যয়বহুল ও জটিল একটি প্রক্রিয়া। এ সরকারের মেয়াদে দেশের সমুদ্রসীমা তথা বঙ্গোপসাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানের জন্য বেশ কয়েকটি প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক (পিএসসি) সইও হয়েছে। জটিল সেই প্রক্রিয়া সম্পন্নের ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার ব্যাপারে বেশ অগ্রগতিও হয়েছে। বলা যায় দীর্ঘ বিরতির পর অবশেষে সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে কিছুটা গতি পেয়েছে। আশার কথা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে নতুন করে জ্বালানির মজুদ ঘিরেও দেখা দিয়েছে সম্ভাবনা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা দেশের সমুদ্র এলাকাকে ২৬টি ব্লকে ভাগ করেছে। এর মধ্যে ১১টি পড়েছে অগভীর আর ১৫টি পড়েছে গভীর সমুদ্র অঞ্চলে। এরই মধ্যে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অর্জিত নতুন সমুদ্রসীমার ভিত্তিতে নতুনভাবে ব্লক ম্যাপ প্রণয়ন করায় বাংলাদেশের অফশোর এলাকায় নতুন বিডিং রাউন্ড আহ্বানের লক্ষ্যে বিদ্যমান রিভাইজড মডেল পিএসসি ২০১২ সংশোধন করে একটি খসড়া অফশোর মডেল পিএসসি ২০১৭ প্রস্তুত করা হয়। এরই মধ্যে চূড়ান্ত খসড়াটি অনুমোদনের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগেও পাঠানো হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ব্লু ইকোনমি সেলের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানে পিএসসি বিডিং রাউন্ড ২০১২-এর আওতায় ওএনজিসি বিদেশ লি. ও অয়েল ইন্ডিয়া লি. এর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও পেট্রোবাংলার ২০১৪ সালের চুক্তি হয়। এই চুক্তি মোতাবেক অফশোর ব্লক এসএস-০৪ এবং এসএস ০৯-এ তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দুটি ব্লকের প্রথম ধাপে তিন হাজার ৮ লাইন কি.মি. 2D Streamer সিসমিক সার্ভে এবং দ্বিতীয় ধাপে দুই হাজার ৫৬ লাইন কি.মি. 2D OBC (ওশান বেড ক্যাবল)  সিসমিক সার্ভের কাজ শেষ করেছে। স্বাক্ষরিত পিএসসি অনুযায়ী ২০১৯ সালের প্রথম কোয়ার্টারের মধ্যে ব্লক এসএস-০৪-এ ১টি এবং এসএস-০৯-এ ২টিসহ মোট ৩টি অনুসন্ধান কূপ খননের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ মোতাবেক ব্লক এসএস-০৪-এ ১টি অনুসন্ধান কূপ (কাঞ্চন-১) খননের জন্য ওএনজিসি ভিদেশ লি. এর সব প্রস্তুতি কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আশা করা হচ্ছে আগামী মাসেই কাঞ্চন-১ কূপ খনন কাজ আরম্ভ হবে। এ ছাড়া পিএসসি বিডিং রাউন্ড ২০১২-এর আওতায় সান্টোস সাঙ্গু ফিল্ড লি. ও ক্রিস এনার্জির সঙ্গে ২০১৪ সালে অফশোর ব্লক এসএস-১১-এ তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সরকার ও পেট্রোবাংলার মধ্যে উৎপাদন চুক্তি হয়। এর আওতায় সান্টোস অগভীর সমুদ্র ব্লক এসএস-১১ এ দ্বিমাত্রিক সিসমিক জরিপের পর্যালোচনার কাজ শেষ করেছে। প্রাপ্ত ফলাফলে ৮/১০টি প্রসপেক্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি এ ব্লকে ৩০৫ বর্গ কি.মি. 3D সিসমিক সার্ভে সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে সেই জরিপের প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনার কাজ চলছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পিএসসি অনুযায়ী অগভীর সমুদ্রাঞ্চল ব্লক শ্যালো সি (এসএন)-১১ এ ২ডি সিসমিক সার্ভে ও ৩ডি সিসমিক সার্ভে শেষ হয়েছে। ব্লক এসএস-৪ এবং ব্লক এসএস-৯ এ প্রথম ধাপে ২ডি মেরিন সিসমিক সার্ভে এবং ২য় ধাপে ২ডি ওবিসি সিসমিক সার্ভের কাজ শেষ হয়েছে। গভীর সমুদ্রের ডিপ সি (ডিএস)-১২ ব্লকে ২ডি সিসমিক সার্ভেসহ ডাটা পর্যালোচনার কাজ শেষ হয়েছে। আমাদের আগামী নভেম্বরে সাগরের ১ হাজার বর্গ কি.মি. এলাকা ৩ডি সিসমিক সার্ভের পরিকল্পনা আছে।

সর্বশেষ খবর