বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি সমৃদ্ধি কামনা

আখেরি মোনাজাত

গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি

দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি সমৃদ্ধি কামনা

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনায় গতকাল বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সম্মিলনে আখেরি মোনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় শেষ হলো এবারের ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা। মোনাজাতে দুনিয়ায় উম্মতদের হেদায়েত, দ্বীনের কাজে ত্যাগীদের কবুল, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। এ সময় জীবনের সব পাপ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে পানাহ চান মুসল্লিরা।

গতকাল ফজর নামাজের পর উর্দুতে বয়ান করেন দিল্লির হাফেজ ইকবাল নায়ার। এটি বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুফতি ওসামা বিন ওয়াসিফ। সকাল ১০টার দিকে উর্দু ভাষায় হেদায়েতি বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা শামীম এবং বাংলায় তা তরজমা করেন মাওলানা আশরাফ আলী। পরে দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ শামীম হেদায়েতি কিছু কথা বলে সকাল ১১টা ৪৬ মিনিটের দিকে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন। উর্দু ভাষায় প্রায় ১৮ মিনিট স্থায়ী ওই মোনাজাত চলে ১২টা ২ মিনিট পর্যন্ত। আখেরি মোনাজাতের আগেই ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মোনাজাত শুরুর পর পরই ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় নেমে আসে নীরবতা।

মাওলানা সা’দ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমার শুরু হয় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি। শুরুর দিন বৃষ্টি থাকলেও তা উপেক্ষা করেই লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমায় শরিক হতে ময়দানে জড়ো হন। গত দুই দিন তারা শুনেন বিশ্ব ইজতেমার বুজুর্গ মুরব্বিদের বয়ান। গতকাল আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে ইজতেমা মুসল্লিদের পাশাপাশি গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং ঢাকাসহ আশপাশের জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ভোর থেকেই ইজতেমা ময়দানে আসতে থাকেন। তাদের অনেকে ময়দানের আশপাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়ক, আশুলিয়া-সাভার সড়ক, কামারপাড়া রোড, বাটা রোডসহ বিভিন্ন অলি-গলি, পার্শ্ববর্তী বাসাবাড়ি ও যানবাহনের ছাদে অবস্থান নিয়ে মোনাজাতে অংশ নেন। মুসল্লিদের সঙ্গে আখেরি মোনাজাতে শরিক হন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা।

মহিলাদের অংশগ্রহণ : মহিলাদের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও অনেক মহিলা মুসল্লি ময়দানের আশপাশে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ও ছাদে বসে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।

হেঁটে বাড়ি ফেরা : আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে প্রশাসন সোমবার মধ্যরাত থেকে ইজতেমা মাঠের চতুর্পাশের (ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস, টঙ্গী ব্রিজ, টঙ্গী-কালীগঞ্জ স্টেশন রোড থেকে মীরেরবাজার পর্যন্ত, আশুলিয়া সড়কের কামারপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত) গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখে। ফলে মোনাজাতে শরিক হতে আসা মুসল্লিরা ওই সব এলাকা দিয়ে হেঁটে ইজতেমাস্থলে আসেন। আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিদের ওই এলাকা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়। উল্লেখ্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শুরু হয় তাবলিগ জামাতের সর্ববৃহৎ সমাবেশ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালনা করেন মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় তাদের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত। পরের দুই দিন (১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি) ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল মাওলানা সা’দ অনুসারীদের। কিন্তু তাদের ইজতেমা শুরুর দিন সকালে বৃষ্টি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিশ্ব ইজতেমার সময় একদিন বাড়িয়ে গতকাল আখেরি মোনাজাত করা হয়।

সর্বশেষ খবর