রবিবার, ১২ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
ছয় বছর পর ভোট দিচ্ছেন প্রণব মুখার্জি

আজ ষষ্ঠ দফায় ভোট গ্রহণ দিল্লিতে নিরাপত্তা জোরদার

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

আজ ষষ্ঠ দফায় ভোট গ্রহণ দিল্লিতে নিরাপত্তা জোরদার

ভারতের লোকসভার (সংসদ) নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপে আজ দিল্লিতে বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা ভোট দেবেন। সেজন্য নিরাপত্তা পাহারা জোরদার করা হয়েছে। আজ দিল্লিতে যারা ভোট দেবেন তারা হলেন- সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ইউপিএ চেয়ারম্যান সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রণব মুখার্জি ছয় বছর পর এই প্রথম দিল্লিতে ভোট দেবেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালে তিনি গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেননি। তার যুক্তি ছিল-রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে। তাই কোনো একটি দলকে ভোট দেবেন না। তার ভোটার হিসেবে নাম ছিল কলকাতায়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদে অবসর নেওয়ার পর তার স্থায়ী নিবাস দিল্লির রাজাজী মার্গ। তার নাম পঞ্জিভুক্ত হয়েছে দিল্লিতে। তিনি বলেন, এখন আমি সাধারণ নাগরিক। তাই ভোট দেব।  সোনিয়াসহ গান্ধী পরিবারের সবাই দিল্লির ভোটার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় ধাপে গুজরাটে ভোট দিয়েছেন। মোদি অবশ্য এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বারানসি আসনের জন্য। ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপ হবে ১৯ মে। তারপর ভোট গণনা ২৩ মে। শেষ দুই ধাপের আগে নিরাপত্তা প্রহরী প্রবল করা হয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম কেবলমাত্র আটটি কেন্দ্রের জন্য ৭৭০ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কাশ্মীরের পরে সব থেকে বেশি আধা সামরিক বাহিনী এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে। আজকের ভোটে প্রধানমন্ত্রী মোদির দল বিজেপি, উত্তরপ্রদেশের মায়াবতী-অখিলেশ জোট এবং পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারিত হতে চলেছে। এই ভোটের ওপরই নির্ভর করবে ভারতে কে সরকার গঠন করতে পারছেন। আজ ভোট নেওয়া হবে দিল্লিসহ সাতটি রাজ্যের ৫৯টি আসনে। ভোটে মোট ৯৭৯ প্রার্থীর জন্য ১০ কোটি ১৭ লাখ ভোটার অংশ নেবেন। মোট বুথের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ৪ লাখ এবং মহিলা ভোটার ৪ কোটি ৪০ লাখের বেশ। আজ দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনে ভোট নেওয়া হবে। প্রতিটি কেন্দ্রেই কংগ্রেস, আমআদমি পার্টি (আপ) ও বিজেপির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। ১৬৪ জনেরও বেশি প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে। হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে আছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন, সিনিয়র কংগ্রেস নেত্রী দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত, ভোজপুরী অভিনেতা-গায়ক মনোজ তিওয়ারী (বিজেপি), সাবেক ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর (বিজেপি) ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মাকেন (কংগ্রেস), অলিম্পিক জয়ী বক্সার বিজেন্দর সিং (কংগ্রেস)। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই সাত কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছিল বিজেপি। উত্তরপ্রদেশ (১৪) : ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি একাই ১৩টি আসনে জয় পেয়েছিল। একমাত্র আজমগড় কেন্দ্রটিতে জয়ী হয়েছিলেন সপা প্রার্থী মুলায়ম সিং যাদব। কিন্তু চলতি নির্বাচনে এই রাজ্যে সপা-বসপা-আরএলডি জোট হওয়ায় কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হতে পারে বিজেপিকে। এবার আজমগড় আসনে প্রার্থী হয়েছেন মুলায়মের ছেলে রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, বিজেপির প্রার্থী ভোজপুরী অভিনেতা দীনেশ লাল যাদব। সুলতানপুর আসনে এবার ভাগ্য পরীক্ষা হবে কেন্দ্রীয় শিশু ও কল্যাণমন্ত্রী মানেকা গান্ধীর। এখানে সপা-বসপা জোট প্রার্থী হয়েছেন চন্দ্রভদ্র সিং, ইউপিএ প্রার্থী সঞ্জয় সিং। হরিয়ানার (১০) : ২০১৪ সালের নির্বাচনে আটটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাতটি আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দল (আইএনএলডি) দুটি এবং কংগ্রেস একটি আসনে জয় পায়। হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সোনিপথ আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুদা। রোহতাক আসনে লড়াই করছেন ভূপিন্দরের পুত্র দীপেন্দর সিং হুদা, আম্বালা আসনে কংগ্রেস প্রার্থী ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কুমারী শৈলজা। ফরিদাবাদ আসনে কেন্দ্রীয় ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রী কৃষাণ পাল গুর্জর। ঝাড়খে র চারটি আসনেই এবার লড়াই ঝাড়খ  মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) ও কংগ্রেসের মধ্যে। মোট প্রার্থী ৬৭ জন। হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে ধানবাদ আসনে কংগ্রেস প্রার্থী সাবেক ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ, দলের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় বিজেপির এই এমপি দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। বিজেপির প্রার্থী পশুপতিনাথ সিং। বিহারের আটটি আসনের সবকটিতে গতবার এনডিএ প্রার্থীরা জিতেছিল। পূর্ব চম্পাহরণ আসনে এবার ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে বিজেপির পাঁচবারের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রাধা মোহন সিংয়ের। মধ্যপ্রদেশের আটটি আসনের অন্যতম ভুপাল আসন। এ আসনে বিজেপির প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরের সঙ্গে লড়ছেন কংগ্রেস প্রার্থী ও রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দিগি¦জয় সিং। গুনা আসনে কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান এমপি ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। মোরেনা আসনে বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং টোমার। পশ্চিমবঙ্গে আটটি আসনে ভোট নেওয়া হবে। এগুলো হলো-তমলুক, কাঁথি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর আসন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রেই জয় পেয়েছিল তৃণমূলের প্রার্থীরা। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম বাঁকুড়া আসনে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত মন্ত্রী ও সিনিয়র রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ঘাটাল আসনে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা দীপক অধিকারী (দেব), ঘাটাল আসনেই বিজেপির প্রার্থী সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা ভারতী ঘোষ, মেদিনীপুর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী মানস ভূঁইয়া, বিজেপির প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে কাজ করা এনজিও সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ডেমোক্রেটিক রিফর্মসের (এডিআর) রিপোর্ট অনুযায়ী ৮৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৬ জনের সম্পত্তি কোটি রুপির বেশি। তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন দেব। তার সম্পত্তির পরিমাণ ৩১ কোটি রুপি, বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের রয়েছে ১৮ কোটি রুপির সম্পত্তি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ঘটনা নিজের হলফনামায় নিজের সম্পত্তি ‘জিরো অ্যাসেট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন পুরুলিয়ার শিবসেনার প্রার্থী রাজীব মাহাতো। এ দফায় রাজ্যের ২৮ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর