রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কুড়িয়ে পাওয়া কাগজ

মির্জা মেহেদী তমাল

কুড়িয়ে পাওয়া কাগজ

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সদস্য পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের নামে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। রাজধানীর আগারগাঁও থেকে এমন প্রতারক চক্রের দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাসপোর্ট অফিসের আশপাশের ফটোকপির দোকানের ফেলে দেওয়া কাগজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মানুষকে প্রতারিত করে আসছে চক্রটি।

গত ১৯ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে শেরেবাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে প্রতারণার অভিযোগে ইসতিয়াক হোসেন রুবেল (৩২) ও কামাল হোসেনকে (৩০) গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, আটককৃতরা এক সময় পাসপোর্ট অফিসে দালাল হিসেবে কাজ করত। ভ্রাম্যমাণ আদালতে এদের একজনের ১৫ দিন এবং অপরজনের ১ মাসের জেল হয়েছিল। জেল থেকে বের হয়ে প্রতারণার কাজে নামে তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য কোনো টাকা লেনদেনের বিধান নেই।

জানা যায়, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের পাশে সারি সারি বেশ কিছু ফটোকপির দোকান রয়েছে। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজ এবং পাসপোর্ট আবেদনের পূরণ করা ফরম ফটোকপি করেন সাধারণ মানুষ। কখনো প্রয়োজনের অতিরিক্ত কপি ফেলেও দেন কেউ কেউ। পুলিশের কাছে খবর ছিল এই ফেলে দেওয়া কাগজ কুড়িয়ে নিয়ে ভয়াবহ প্রতারণার ফাঁদ পাতে একটি চক্র।

সেই অনুযায়ী গত ১৯ জুন আগারগাঁও এলাকায় অবস্থান নেয় গোয়েন্দা পুলিশ। ওইদিন তাদের নজরে আসে কাগজ কুড়াচ্ছেন একজন। একই কাজ করতে দেখা যায় আরও একজনকে। তাদের ঘিরে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে, বাড়ে নজরদারিও। এক পর্যায়ে দুজন এক হয়ে কুড়ানো কাগজ মেলাতে শুরু করলে হাতেনাতে ধরে ফেলা হয় তাদের। আটকের পর ডিবি উত্তরের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) বদরুজ্জামান জিল্লু জানান, তারা এসবির পরিচয় দিত। এই পরিচয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে প্রতারণা করত।  পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে, কুড়িয়ে নেওয়া কাগজ থেকে তথ্য তারা সংগ্রহ করে মানুষকে ফোন দিত। এসবি পরিচয়ে পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের নামে টাকা দাবি করত। আর টাকা না দিলে ভেরিফিকেশনে নেতিবাচক প্রতিবেদন দেওয়ারও ভয় দেখাত।  তাদের আটকের আগে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন  দুজন ভুক্তভোগী। তারা জানান, পাসপোর্টের আবেদন জমা দেওয়ার দুই দিনের মাথায় এসবি পরিচয়ে ফোন আসে তার কাছে। ভেরিফিকেশনের জন্য টাকা চাওয়া হয়। বিকাশের মাধ্যমে সেই টাকা শোধও করেন তারা। পরে আসল এসবি থেকে ফোন পেলে ভুল ভাঙে তাদের। এদের একজন মগবাজার নয়াটোলা চেয়ারম্যান গলির নুর এ হাসনাত অভিযোগ করে জানান, গত ২৮ মে তিনি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দেন। পরদিন বিকালে তার স্ত্রীর মোবাইলফোনে এসবির এসআই তরিকুল সাত্তার পরিচয়ে একজন কল দেন। নিজেকে পাসপোর্ট আবেদন ভেরিফিকেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বলে জানান। ফোনে তিনি পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য তার কাছে সব কাগজপত্র আধাঘণ্টার মধ্যে জমা দিতে বলেন, অন্যথায় ভেরিফিকেশন সঠিক হবে না বলে জানান। কিছু সময়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তার মোবাইলের বিকাশ নম্বর পাঠিয়ে দেন। ওই নম্বরে প্রথমে তিনি ২ হাজার টাকা এবং পরে আরও ১৫শ টাকাসহ মোট ৩৫শ টাকা পাঠান। এ ঘটনার সপ্তাহখানেক পর গত ৯ জুন জোলেখা নামে এসবির এক এসআই মোবাইলে ফোন করে পাসপোর্ট আবেদনের বিপরীতে সব কাগজপত্র জমা দিতে বলেন। পরদিন কাগজপত্র নিয়ে এসবি অফিসে গিয়ে আগের ঘটনা ওই এসআইয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে পারেন যে, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সেখানে তিনি জানতে পারেন, তার মতো তামিম আক্তার, জোবাইদা আক্তার এবং লিটন নামে আরও তিনজন একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, পাসপোর্ট অফিসের কাছে ফটোকপির দোকানে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ফটোকপির পর ফিরে আসার আগে ভালো করে দেখা উচিত, অতিরিক্ত কোনো কপি সেখানে ফেলে রেখে যাচ্ছেন কি না। অন্যথায় ফেলে দেওয়া সেই কাগজই হয়ে উঠতে পারে বড় ধরনের কোনো ফাঁদের হাতিয়ার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর