রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ঝড় মোকাবিলা ও মানুষকে রক্ষার জন্য সব রকম প্রস্তুতি

বিপথে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা বন্ধ : প্রধানমন্ত্রী

শ্রমিক লীগের সভাপতি মন্টু খসরু সম্পাদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিপথে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা বন্ধ : প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল পায়রা উড়িয়ে শ্রমিক লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঝড় মোকাবিলা এবং মানুষকে রক্ষা করার জন্য সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া আছে। এমনকি ঝড়-পরবর্তী ত্রাণ কার্যক্রম যাতে চালানো যায় সে ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। ঘূর্ণিঘড়ে ক্ষয়ক্ষতি যেন না হয় সেজন্য দেশবাসীকে দোয়া করার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক লীগের ১৩তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে অস্থিরতায় কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, উসকানি দিয়ে ও মুখরোচক কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিপথে নেওয়া মেনে নেওয়া হবে না। আর তাদের যদি এসব করতে হয় তাহলে অর্থ নিজেদেরই জোগান দিতে হবে। নইলে সরকার সব টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেবে। কথায় বলে স্বাধীনতা ভালো, তবে তা বালকের জন্য নয়, এটাও মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, অর্থ সরকার দেবে। সব রকম উন্নয়ন প্রকল্প সরকার করবে। সেটা নিতে খুব ভালো লাগবে। আর সরকার সেখানে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এটা কখনো হতে পারে না। তিনি বলেন, আমি মনে করি পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে আমাদের ছেলেমেয়েরা যে উচ্চ শিক্ষা পায়, পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত অল্প খরচে তা দেওয়া হয় না। সেখানে স্বায়ত্তশাসন আছে এ কথা সত্যি। কিন্তু টাকা তো সরকার দিচ্ছে, সেখানে শিক্ষকদের বেতন, ভাতা যা কিছু তারা পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষার্থী ইউনিভার্সিটিতে কয় টাকা খরচ করে বা মাসে বড়জোর দেড়শ টাকা খরচ করে। কিন্তু এই টাকায় কি উচ্চ শিক্ষা হয়! যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, কত লাখ টাকা লাগে প্রতি সেমিস্টারে? আর আমাদের পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে কত লাগে? সে টাকা কে জোগান দেয়? জোগান দেয় সরকার। তিনি বলেন, প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয় এক একজন ছাত্রের পেছনে। আর ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেল কিংবা কারিগরিতে আরও বেশি টাকা খরচ হয়। সব টাকা তো সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ডিসিপ্লিন থাকবে, উপযুক্ত শিক্ষা পাবে এবং নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলবে। সেটাই আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উসকানি দিয়ে ছাত্রদের বিপথে নেওয়া আর এখানে মুখরোচক কথা বলা, এটা কখনো কেউ মেনে নিতে পারে না। আর তা যদি করতে হয় তাহলে নিজেদের অর্থ নিজেরা জোগান দিতে হবে। নিজেদের বেতন নিজেরা নিতে হবে। নিজেদের খরচ নিজেরা চালাবে। সরকার সব টাকা বন্ধ করে দেবে। কারণ স্বায়ত্তশায়িত প্রতিষ্ঠান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক দেবে, সরকার কেন খরচ করবে। সরকার কেন খরচ করবে তাহলে সেটাও তাদের চিন্তা করতে হবে, কোনটা করবে?

প্রধানমন্ত্রী অভিযোগের সুরে বলেন, আমি এ জন্য বললাম, ইদানীং দেখছি, কোনো কথা নেই বার্তা নেই, ব্যবস্থা নেওয়া হওয়ার পরও কয়েকজন মিলে  অহেতুক অভিযোগ তুলছে। আমাদের আইন আছে কেউ যদি কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনে, আর সেটা যদি প্রমাণিত না হয় তাহলে যে অভিযোগকারী ওই আইনে তার বিচার হয়, সাজা হয়। এটা কিন্তু আইনে আছে। কাজেই যারা কথা বলছেন, তারা আইনগুলো ভালোভাবে দেখে নেবেন, সেটাই আমরা বলব। কারণ আমরাও তো ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ছিলাম, পড়াশোনা করেই আসছি। এটাও তাদের ভুলে গেলে চলবে না। সম্মেলনে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী এবং শ্রমিক লীগের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনটির সভাপতি শুকুর মাহমুদ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। পরে শিল্পী ফকির আলমগীরের নেতৃত্বে একই শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। বিকাল ৩টার দিকে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়। এতে ফজলুল হক মন্টু সভাপতি, আজম খসরু সাধারণ সম্পাদক ও মোল্লা আবুল কালাম আজাদ কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন। সম্মেলনে সারা দেশের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার প্রায় ৮ হাজার কাউন্সিলর এবং ডেলিগেটরা যোগ দেন। কয়েকটি দেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি এবং শ্রমিক নেতারাও সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিক শ্রেণির ভাগ্য পরিবর্তনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য কাজ করেছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের শিকার হচ্ছিল বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকার শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে এবং তাদের উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অর্থনীতি শুধু কৃষির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখিনি, শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। শ্রমিক সমাজের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়ন হয়েছে। শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা এবং তাদের পরিবারের উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করছে। এই নীতি নিয়েই আমরা দেশ পরিচালনা করি। তিনি বলেন, ১৯৯৬-তে ক্ষমতায় আসার পর শ্রমিকদের বেতন-মজুরি বৃদ্ধি করি। পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেয়। আজকে শ্রমিকদের যে বেতন সেটি ৩৮০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৮ হাজার টাকায় উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করেছি। তারা যেন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশ যেতে পারে এবং পরিশোধ করতে পারে। সেজন্য এই ব্যাংক। কাজেই অনুরোধ থাকবে আমাদের যে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার আছে তার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে কোথায় কী কাজ করতে যাচ্ছেন, সেই তথ্য নিয়ে বিদেশে যাওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর