শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজধানীতে যত্রতত্র পার্কিং ঠেকাতে ভিডিও মামলা

জরিমানা না দিলে ছাড়পত্র বন্ধ

মাহবুব মমতাজী

পার্কিংয়ের জায়গা নয়, তবু গাড়ি পার্ক করছেন চালকরা। এসব ঠেকাতে ভিডিও ক্যামেরা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। অবৈধ পার্কিং, উল্টো পথে চলা বা অন্য যে কোনোভাবে আইন ভাঙলেই গাড়ির মালিকের ঠিকানায় পৌঁছে যায় চিঠি। জরিমানা নিশ্চিত। হেলাফেলা করেও লাভ নেই। সেই মামলার খবর চলে যায় বিআরটিএর সার্ভারেও। জারিমানা না দিলেই ফিটনেস ছাড়পত্র বন্ধ। রাজধানীতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এমন ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। রাস্তার পাশে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে ওতপেতে থাকছেন ট্রাফিক পুলিশের মিডিয়া টিমের সদস্যরা। কোনো গাড়ি উল্টো পথে গেলে বা সিগন্যাল না মানলে কিংবা রাস্তার পাশে যত্রতত্র পার্কিং করে রাখলে ভিডিও করে রাখা হয়। এ ভিডিও ফুটেজগুলো জমা হচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)  সদর দফতরের ট্রাফিক বিভাগে। যেসব গাড়ি আইন অমান্য করছে ওই গাড়িগুলোর মালিকের তথ্য বিআরটিএ থেকে সংগ্রহ করে মালিককে ডাকা হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ দফতরে। এভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে জোরদার করা হয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়। ট্রাফিক পুলিশের দফতরে মালিককে ভিডিও দেখিয়ে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। কেউ জরিমানা না দিতে চাইলে বিআরটিএকে জানিয়ে ফিটনেস সনদ না দেওয়ার সুপারিশ করে ট্রাফিক বিভাগ। এ ছাড়া পথে মামলা-জরিমানা তো আছেই। এর বাইরে গোপনে ভিডিও করে মালিককে ডেকে মামলা দেওয়ার পরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বেপরোয়া চালকদের। তাই নতুন আইনকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। সড়কে বিশৃঙ্খলাই নয়, চালকদের বেপরোয়া আচরণ প্রায়ই কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণ। পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজউদ্দিন আহাম্মেদ জানান, নতুন আইন হওয়ার পর সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ট্রাফিক মামলা দেওয়া নিষেধ করা আছে। গতকাল থেকে এ আইন সংক্রান্ত সচেতনতা সৃষ্টিতে ট্রাফিক পক্ষ শুরু হয়েছে। আর পুরনো আইনে প্রতি মাসেই ৩০ হাজার ভিডিও মামলা হতো। এতে করে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং অনেকাংশই কমে যায়। জানা যায়, ২০১৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ভিডিও মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। রাজধানীর দুই বিভাগের দুটি টিম দিয়ে এ কার্যক্রম চলে। ২০১৭ সাল থেকে পুরোদমে মাঠে নামে ট্রাফিক বিভাগ। গত বছর ঢাকা শহরের মধ্যে চারটি টিম বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াত। এখন প্রত্যেক ট্রাফিক সার্জেন্ট মোবাইলে ভিডিও করে মামলা দিচ্ছেন। যেসব এলাকায় সার্জেন্টরা থাকেন না, সেসব এলাকায় কাজ করে ট্রাফিকের মিডিয়া টিমের সদস্যরা। ২০১৬ সালে ভিডিও ফুটেজ থেকে মামলা হয়েছিল ৬ হাজার ৭৪৯টি। আর ২০১৭ সালে মামলা হয় ২৪ হাজার ৩৬৯টি। গত বছর আর চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ মামলা হয়েছে। গত ২০ আগস্ট পুরানা পল্টন মোড়ে অবৈধ পার্কিং অবস্থায় পাওয়া যায় একটি মাইক্রোবাস। ট্রাফিক সদস্য গাড়ির চালক বা মালিককে না পেয়ে ভিডিও রেকর্ড করেন। সেই ভিডিওর ভিত্তিতে ট্রাফিকের দক্ষিণ বিভাগ থেকে নোটিস চলে যায় মাইক্রোবাসটির মালিকের ঠিকানায়। পরে ওই মালিককে ৭০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, তারা সাধারণত পাঁচ ধরনের আইন ভঙ্গে ভিডিও মামলা করে। এগুলো হলো- উল্টোপথে আসা, অবৈধ পার্কিং, গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইলফোনে কথা বলা, সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি এবং সিগন্যাল অমান্য করা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবৈধ পার্কিং করা মোটরযানের চালক বা মালিককে পাওয়া যায় না তখন ভিডিও মামলা করা হয়। ১ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে রাজধানীতে মামলা হয়েছে আড়াই থেকে তিন হাজার। এসব যানবাহন থেকে প্রতিদিন জরিমানা আদায় হয়েছে ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকা। নতুন সড়ক আইন হওয়ার পর আপডেট পোজ মেশিন এবং কাগজপত্র না থাকায় ট্রাফিক পুলিশের মামলা দেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর