মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
পিলখানা হত্যার ১১ বছর

এবার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষা

খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ, দন্ডের বিরুদ্ধে আসামিরা, বিস্ফোরক মামলা এখনো নিম্ন আদালতেই

আরাফাত মুন্না

এবার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষা

পিলখানায় বিডিআর (বিজিবি) বিদ্রোহের ১১ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গুলি ও বোমার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে রাজধানী। ওই দিন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের হাতে। টানা এক দিন এক রাত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় ২০১৭ সালে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে হাই কোর্টের দেওয়া প্রায় ৩০ হাজার পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিও এরই মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। আসামি ও মৃত্যুদন্ডের দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলা এখন চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। রাষ্ট্রপক্ষ খালাস পাওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে এবং আসামিরা দন্ডের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে এ ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলাটি এখনো নিম্ন আদালতের গন্ডিই পেরোতে পারেনি। ১ হাজার ৩৪৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১৪৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে এত বছরে। হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় দায়রা জজ আদালত ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ১৫৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়ে রায় দেয়। এরপর ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল নিষ্পত্তি করে ১৩৯ আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও ১৮৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়ে রায় দেওয়া হয়। রায়ে ২২৮ আসামিকে তিন থেকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। সর্বশেষ ৮ জানুয়ারি এ মামলায় ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট।

এ মামলার পরবর্তী প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার পৃষ্ঠার রায়। অনেক বড় এ রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেতে সময় লাগবে। শুধু স্ট্যাম্প লাগিয়ে সার্টিফায়েড কপি নিলেও প্রায় পৌনে ২ লাখ টাকা খরচ হবে। আর ফলিও ব্যবহার করলে তো অনেক বেশি। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু খালাস পাওয়া আসামিদের বিষয়ে আপিলের চিন্তা করছি। খরচের বিষয়টি মাথায় রেখে অল্প সাজা পাওয়া আসামিদের ক্ষেত্রে আপিল করার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত।’ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায়ের সার্টিফায়েড কপি তুলে আমরা দেখব। পর্যালোচনা করব। এরপর আপিল করব। আপিলে ন্যায়বিচার পাব।’ এই আইনজীবীর মতে, পৃথিবীতে এত বড় ফৌজদারি মামলার রায় হয়নি। তাই ৩০ দিনের মধ্যে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে সমস্যা হবে। প্রয়োজনে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলা হবে বলেও সেদিন তিনি জানিয়েছিলেন।

বিস্ফোরক মামলায় ধীরগতি : হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় দুটি ধাপ শেষ হলেও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলাটি এখনো বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলায় ১ হাজার ৩৪৪ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ৮ মার্চ মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘটনাস্থল, সাক্ষী ও আসামি একই হওয়ায় দুটি মামলায় একসঙ্গে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। তবে আসামিপক্ষের আবেদনে মামলা দুটির বিচারকাজ পৃথকভাবে চলে। হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতে রায় হয়। এরপর সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের এ মামলায় নিরাপত্তার কারণে আদালতে হাজির করা নিয়ে বিলম্ব হয়।’ তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। আর ১০০ জনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হলে চলতি বছরই মামলাটির বিচারকাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’

বিচার হয়েছে নিজস্ব আইনেও : সূত্র জানান, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিচার হয় এ বাহিনীর নিজস্ব আইনেও। এতে মোট ১১ হাজার ২৬৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তার মধ্যে ১০ হাজার ৯৭৩ জনের বিভিন্ন ধরনের সাজা হয়। সাজাপ্রাপ্তের মধ্যে ৮ হাজার ৭৫৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বাকিরা প্রশাসনিক দন্ড শেষে আবার চাকরিতে যোগদান করেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিশেষ আদালত গঠন করে ৬ হাজার ৪৬ জওয়ানকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এসব মামলায় ৫ হাজার ৯২৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয়। তাদের প্রত্যেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আর বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত ১১৫ জন চাকরি ফিরে পেয়েছেন।

কর্মসূচি : পিলখানা হত্যাকান্ডের এই দিবসটিকে কেন্দ্র করে আজ সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ ছাড়া দিবসটি পালন উপলক্ষে বিজিবির যেসব স্থানে রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন হয় সেসব স্থানে বিজিবির পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবির ব সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবেন। শহীদদের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দফতরসহ সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় খতমে কোরআন, বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামীকাল বাদ আসর পিলখানা কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া মাহফিল হবে।

সর্বশেষ খবর