বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আরও ৩৬টি এনআইডির খোঁজে গোয়েন্দারা

শিগগিরই ২২ ব্যাংক কর্মকর্তাকে তলব

সাখাওয়াত কাওসার

আরও ৩৬টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) খোঁজে গোয়েন্দারা। ভুয়া এনআইডি দিয়ে ঋণ দেওয়ায় জড়িত ২২ জন ব্যাংক কর্মকর্তার তালিকা তৈরি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ডিবি কার্যালয়ে তলব করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। গোয়েন্দাদের ধারণা, এসব ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া ছাড়াও হয়তো ইতিমধ্যে অনেক ভয়ঙ্কর অপরাধ ঘটিয়ে ফেলেছে প্রতারকরা। এবার দুটি ভুয়া এনআইডিসহ রাজধানীর দারুস সালাম থেকে মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি এক কোটি টাকা লোন ওঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। মহিউদ্দিন ছাড়াও আগে গ্রেফতার সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর, আনোয়ারুল ইসলাম ও সুমন পারভেজকে আদালতের নির্দেশে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, ‘ভুয়া এনআইডির কারিগররা এখন পর্যন্ত আমাদের বলেছেন, তারা ৫০টি ভুয়া এনআইডি তৈরি করেছেন। সে অনুযায়ী আরও ৩৬টি এনআইডি এখনো বাইরে রয়েছে। গ্রেফতার নতুন আসামিসহ পুরনো তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। তবে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। আমরা আশা করছি এদের কাছ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করতে পারব। যারা এসব ভুয়া এনআইডি নিয়েছেন, তাদের প্রত্যেককেই চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। মূলত ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্যই ভুয়া বা দ্বৈত এনআইডি তৈরি করা হতো। ব্যাংক ঋণ পাস হলে সেই ঋণের ১০ শতাংশ হারে কমিশন নিত চক্রের সদস্যরা। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের আরও কেউ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আছেন কিনা তাও বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় যারা প্রতারকদের সহায়তা করেছেন এমন ২২ জন ব্যাংকারকে শিগগিরই ডিবি কার্যালয়ে তলব করা হবে। ১২ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোড এলাকার ডি ব্লক থেকে নির্বাচন কমিশনের দুই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরসহ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন নির্বাচন কমিশনের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর ও আনোয়ারুল ইসলাম এবং দুই দালাল সুমন পারভেজ ও মজিদ। এ ছাড়া আবদুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যক্তি নিজের নামে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে স্ত্রীর নামে আরেকটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গিয়ে হাতেনাতে গ্রেফতার হন। সূত্র বলছে, সুমন পারভেজ ও মজিদ গ্রাহক খুঁজে এনে নির্বাচন কমিশনের দুই কর্মী সিদ্ধার্থ ও আনোয়ারুলের কাছে নিয়ে যেতেন। তাদের তৈরি করে দেওয়া জাল এনআইডি দিয়ে মিল্টন নামে এক ব্যক্তি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের পুরান ঢাকার নর্থ সাউথ রোডের শাখা থেকে তিন কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। ইয়াছির নামে এক ব্যক্তি সিটি ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখা থেকে ঋণ নিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। সালেহ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। আবদুল মজিদ নামে এক ব্যক্তি এনআরবি ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে নিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। আবদুল্লাহ আল মামুন নিজেই ভুয়া এনআইডি দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৯ লাখ ২৫ হাজার ও সিটি ব্যাংকের নিকেতন শাখা থেকে নিয়েছেন ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ভুয়া এনআইডি  তৈরি করে আশিক নামে এক ব্যক্তি ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা, জাভেদ নামে এক ব্যক্তি লংকাবাংলার ধানমন্ডি শাখা থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা ও জহুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি মেঘনা ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। সর্বশেষ গ্রেফতার মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে শপিং ব্যাগের ডিজাইন এবং করোনাকালে মাস্কের ব্যবসা করতেন।

অতি সহজেই ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন তিনি।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেফতার ব্যক্তি এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতরা কেমন অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন সে বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে প্রতারক চক্রের মূল হোতা সুমন ও মজিদের বিষয়ে জানতে পেরেছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। সুমনের উত্তরায় নিজের ফ্ল্যাট রয়েছে। মজিদের মিরপুরসহ রাজধানীতে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও গাড়ি। দুই বছর ধরে ভুয়া এনআইডি তৈরি করে এমন সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর