বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক এবং দাহ্য কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য মজুদের কারণে দেশের সমুদ্র এবং স্থলবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। নৌ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিপজ্জনক পণ্যের নিলাম সম্পন্ন হয়নি। বন্দরগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থে এসব পণ্য অপসারণ প্রয়োজন। এমন প্রেক্ষাপটে জরুরি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে চিঠি দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দেশে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ-চবক সচিব মো. ওমর ফারক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাসায়নিক বা কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য ধ্বংসের বিষয়ে অন্তত ১৩ থেকে ১৪টি প্রতিষ্ঠানে ছাড়পত্র ও সম্মতি নিতে হয়। এ বিষয়ে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয় সভা হয়েছে। যেসব রাসায়নিক কেমিক্যাল বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো দ্রুতই ধ্বংস করা হবে। কেননা, বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক পণ্য মজুদের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ঝুঁকি দিন দিন বাড়বে, বৈ কমবে না। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) ফরিদ আল মামুন বলেন, ৫ টনের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক মজুদ রয়েছে বন্দরের পি-শেডে। এর মধ্যে হাইড্রোক্লোরাইড, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, বিপজ্জনক কঠিন পদার্থ, বিপজ্জনক উপাদান ছাড়াও কিছু কস্টিক সোডা রয়েছে। যা ধ্বংসের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাস্টমস।
জানা গেছে, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে জমা হওয়া বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক, দাহ্য, বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক কনটেইনার, কার্গো নিষ্পত্তি, নিলাম, ধ্বংস ও অপসারণ করতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। জানা গেছে- চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ছাড়াও সারা দেশের স্থলবন্দরগুলোতে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক, দাহ্য, বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক পণ্য, এমোনিয়াম নাইট্রেট, বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা ৬০ লট বিপজ্জনক কেমিক্যালসহ পড়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের ২১১ লট পণ্য নিলামে তুলছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর নিয়মিত নিলামের অংশ হিসেবে এ নিলাম ডাকা হয়েছে। নানা জটিলতায় চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বিপজ্জনক পণ্য সম্প্রতি নিলামে বিক্রি ও ধ্বংস করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারই অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে দাহ্য পদার্থ বা কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য নিলাম ও ধ্বংস করা হবে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস এসব পণ্য নিলামে তৎপর রয়েছে। সব রাসায়নিকই বিপজ্জনক নয় বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, বন্দরের তালিকা পাওয়ার পর নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিলামের জন্য ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আনা পণ্যও রয়েছে। বন্দরের চিঠি পাওয়ার পর পি শেডে থাকা বিপজ্জনক পণ্যসহ যেসব পণ্যের তালিকা আছে, সেগুলোকে নিলামে তোলা হয়েছে। এসব পণ্য বন্দর থেকে বের করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর যেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে বা চিহ্নিত করা যায়নি সেগুলো পর্যায়ক্রমে ধ্বংস করা হবে। কাস্টমস সূত্র জানায়, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় সম্প্রতি বিভিন্ন শেডে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা বিপজ্জনক কেমিক্যাল নিলামে তোলা কিংবা ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। মূলত এরপর থেকেই কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য নিলামে তোলা শুরু হয়। সর্বশেষ নিলামে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালের ৬০টি লট থাকছে। এর মধ্যে পি-শেডে রয়েছে ২৬ লট, অন্যান্য শেডে ২৪ লট। ৭ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতি মাসে সাধারণত একবার করে নিলাম ডাকা হয়। কাস্টমস সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের পি-শেডে থাকা বিপজ্জনক পণ্যের মধ্যে ৪৩টি লটসহ মোট ৪৯টি লট নিয়ে একটি বিশেষ নিলামের আয়োজন করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। গত ৭ সেপ্টেম্বর এসব পণ্যের নিলামও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ৪৯টি লটের ৪৩ টিতেই রয়েছে বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্য। অন্যদিকে পচনশীল ফলমূল রয়েছে ছয়টি লটে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক পণ্যগুলোর নিলাম না দিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ধ্বংসের কাজ বাস্তবায়ন করবে কাস্টমস।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        