বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বইমেলা চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত

মোস্তফা মতিহার

বইমেলা চলবে সন্ধ্যা  সাড়ে ৬টা পর্যন্ত

করোনা সংক্রমণের কারণে অমর একুশে বইমেলার সময় আড়াই ঘণ্টা কমিয়ে দিয়েছে বাংলা একাডেমি। রাত ৯টার পরিবর্তে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মেলার সময় বেঁধে দিয়েছে। প্রকাশকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শ ছাড়া হঠাৎ বাংলা একাডেমির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রকাশকরা। বেশির ভাগ প্রকাশক বলছেন, দুপুর ৩টার দিকে মেলা শুরুর পর প্রায় ৬টা পর্যন্ত অলস সময় কাটান প্রকাশক ও তাদের স্টল এবং প্যাভিলিয়নে কর্মরতরা। সন্ধ্যা ৬টার পর মেলা জমে ওঠে। আর ওই সময়টাতে মেলার প্রবেশদ্বার বন্ধের ঘোষণা দিয়ে প্রকাশকদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে বাংলা একাডেমি। তারা মনে করেন, করোনার সংক্রমণ যেহেতু বাড়ছে সেহেতু মেলা শুরুর সময়টা পিছিয়ে দিয়ে বন্ধের সময়টাও বাড়িয়ে দেওয়া হোক। তিন ঘণ্টা মেলা যদি করতেই হয় তাহলে বিকাল ৫টা থেকেই মেলা শুরু করা উচিত। কারণ এর আগে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ জনশূন্য থাকে। যেই সময় মেলায় বিক্রি শুরু হয় সেই সময়ে মেলা বন্ধের এমন সিদ্ধান্তে প্রকাশকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে জানান বেশির ভাগ প্রকাশক। রাত ৯টার পরিবর্তে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অমর একুশে বইমেলা বন্ধে বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে মেলার ১৪তম দিন গতকাল বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে প্রতিবাদী পদযাত্রা করেছেন প্রকাশকরা। এই পদযাত্রায় অংশ নেন সময় প্রকাশনীর কর্ণধার এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, কাকলীর নাসির আহমেদ সেলিম, অনুপমের মিলন নাথ, অন্বেষার শাহাদাত হোসেন, পার্ল-এর হাসান জায়েদী তুহিন, নালন্দার রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল, তাম্রলিপির এ কে এম তরিকুল ইসলাম রনি, পলল-এর খান মাহবুব প্রমুখ। পদযাত্রার ফরিদ আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হবে এবং সেই লক্ষ্যেই একটা নির্দেশনা মেনে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। দেশের প্রায় সব মার্কেট এবং দোকান রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। যে কোনো বাণিজ্যিক অঞ্চল থেকে বইমেলা অনেক বেশি নিরাপদ হওয়া সত্ত্বেও বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ প্রকাশকদের অগ্রাহ্য করে এবং কোনো ধরনের পরামর্শ না করে মেলা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চালু রাখার সময় বেঁধে দিয়েছে। এটা অযৌক্তিক ও অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এবং পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টির সুরাহার জন্য যাবে। এরপর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানাবে। ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, সাড়ে ৬টায় মেলা বন্ধ করার বিষয়ে বাংলা একাডেমির একতরফা সিদ্ধান্তে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব চরমভাবে। ৩টার সময় মেলা শুরু হওয়ার পর মেলা প্রাঙ্গণ পুরো খালি থাকে। ৫টার দিকে লোকজন আসা শুরু করে। ওই সময়টাতে আমাদের বিক্রি বেশি হয়। পারিজাত প্রকাশনীর শাখাওয়াত হোসেন লিটু বলেন, সাড়ে ৬টায় বন্ধ না করে ৪টায় শুরু করে ৮টা পর্যন্ত মেলার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া উচিত। ৩টার সময় মেলা শুরু করে লাভ কী? বর্ণমালার কর্ণধার মামুন-অর-রশিদ বলেন, বাংলা একাডেমির এই একতরফা সিদ্ধান্ত আমাদের প্রকাশনা শিল্পকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। অন্য সবার মতো আমরা সরকারকে ট্যাক্স ও ভ্যাট দিয়ে ব্যবসা করি। সব সেক্টরে সরকার প্রণোদনা দিলেও আমাদের প্রকাশনা সেক্টরে কোনো প্রণোদনা দেয়নি। বাংলা একাডেমির এই সিদ্ধান্ত আমাদের হুমকির মুখে ফেলেছে।

সর্বশেষ খবর