মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

গ্রামের সঙ্গে শহরেও সামাজিক সুরক্ষা দিন

ড. সায়মা হক বিদিশা

গ্রামের সঙ্গে শহরেও সামাজিক সুরক্ষা দিন

২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি শহরের দরিদ্রদেরও সামাজিক সুরক্ষা বা নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। এই অর্থনীতিবিদ বলেছেন, দেশে সামাজিক সুরক্ষায় ১০০ প্রকল্প থাকলেও শহরের দরিদ্রদের জন্য আছে মাত্র তিন থেকে চারটি প্রকল্প। বাকি সবই গ্রামে। এবারের বাজেটে শহরের বস্তিগুলোকে টার্গেট করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রসারিত করতে হবে।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। তিনি বলেন, এবার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক কর্মসূচিতে জোর দিতে হবে। বাজেটে কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক কার্যক্রম বাড়ানোর মাধ্যমে মানুষের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি কর্মসৃজন প্রকল্প বাড়াতে হবে। তিনি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বলেন, এ খাতে সব সরকারি কর্মসূচির ডিজিটাল তথ্যভান্ডার তৈরি করতে হবে। সুবিধাভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্পসমূহে স্বচ্ছতা আনা যাবে। এর সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা যুক্ত করে সামাজিক সুরক্ষা খাতের সব ধরনের সুবিধাভোগীর মোবাইলে অর্থ প্রেরণ নিশ্চিত করা যাবে। ইতিমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সরকার এ ডিজিটাল সুবিধা চালু করেছে। অর্থনীতির এই শিক্ষকের মতে, করোনার ব্যাপ্তি ও সময় এবং এর পাশাপাশি সরকার গৃহীত কর্মসূচিগুলোর সাফল্যের ওপর নির্ভর করবে কতটা দ্রত আয় ও কর্মসংস্থানের ক্ষতি মোকাবিলা করে শ্রমবাজারকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শ্রমবাজারের ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তাদের সহায়তা দেওয়া এবং তাদের আয় ও কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করাই হচ্ছে মূল চ্যালেঞ্জ। এবারের বাজেটে সে উদ্দেশ্যে বরাদ্দ ও নীতিসহায়তা থাকা জরুরি।

তিনি বলেন, ‘করোনাকালীন আমাদের শ্রমবাজার ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের আয় এবং কর্মসংস্থানের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রণোদনা দেওয়া। অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত আমাদের ৮৫ শতাংশ শ্রমিকেরই আয় ও কর্মসংস্থান ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সার্বিকভাবে এ ক্ষতি হতে পারে অন্তত কয়েকটি মাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে- এক. স্বল্পকালীন ভিত্তিতে কাজ হারানো; দুই. দীর্ঘ মেয়াদে কাজ হারানো বা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়া; তিন. কাজ না হারালে বা ব্যবসা বন্ধ না হলেও ব্যবসা সংকুচিত হয়ে যাওয়া। ফলে ব্যক্তির মজুরি, আয়, মুনাফা কমে যাওয়া; চার. পেশা পরিবর্তনের কারণে নিম্ন আয় বা নিম্ন অবস্থানের পেশায় চলে যেতে বাধ্য হওয়া। এ ক্ষেত্রে দেশি ও বিদেশি চাহিদা সংকট কাটিয়ে না উঠতে পারলে শ্রমবাজারকে পুরোপুরি চাঙা করা কঠিন হবে। তাই এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান রক্ষায় প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ ও কর্মপরিকল্পনা। অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, শ্রমিক ছাঁটাই প্রতিরোধে শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাজেটে দিকনির্দেশনা দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনার অর্থ খরচে সার্বক্ষণিক পরিবীক্ষণ ও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। তবে মনে রাখতে হবে, সরকারি সহায়তা নয় বরং গার্মেন্ট মালিকদেরই তাদের শ্রমিকদের দায়িত্ব নিতে হবে। কিছু শ্রমিক ছাঁটাই হয়তো হবে সে ক্ষেত্রে এমন শ্রমিকদের খুব দ্রুত অন্য ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর জন্য বিশেষ ঋণসুবিধা ও ভাতা থাকতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকা জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের এই শিক্ষক আরও বলেন, শিল্প ও সেবা খাত ছাড়া কৃষি খাতে বিশেষত কাজ হারিয়ে শহর থেকে যারা গ্রামে ফিরে গেছেন তাদের কৃষিতে কর্মসংস্থান তৈরির জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন। স্বল্প মূলধনের কৃষিভিত্তিক ব্যবসাকে এ ক্ষেত্রে বাজেটে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এ ছাড়া বৈশ্বিক মন্দার কারণে কাজ হারানো প্রবাসী শ্রমিকদের প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি বাজেটে তাদের জন্য বিশেষ ঋণসুবিধা থাকা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর