রবিবার, ৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

কৃষি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে

অধ্যাপক শাহ আজম

কৃষি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহ আজম বলেছেন, বাজেট একটি রাষ্ট্রের বার্ষিক অর্থ ও সম্পদের পরিকল্পনা এবং সার্বিক নীতি-কৌশলের একটি সমন্বিত রূপরেখা। ফলে বাজেটে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মনোভাব ও দর্শন প্রতিফলিত হয়। এখন বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির একটি দৃশ্যমান উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর পরও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে আগামীর বাজেটে।

তিনি বলেন, করোনা-পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশের বিশেষ অর্জন ছিল ৮.২ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং দরিদ্র ও হতদরিদ্রের সংখ্যার সংকোচন ছিল শতকরা ২০.৫ ও ১০.৫ ভাগ। করোনা মহামারীর ভয়াল গ্রাসে বিপর্যস্ত বিশ্ব পরিস্থিতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে (আমপান) বাংলাদেশের অর্থনীতিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে এবং বেকারত্বের সঙ্গে বৃদ্ধি পায় দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা। এ দুর্যোগে যদিও দেশের প্রধান রপ্তানি শিল্প গার্মেন্টস উৎপাদনমুখী থাকতে সক্ষম হয়, দেশের অধিকাংশ উৎপাদন ও সেবা শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ একরকম বন্ধ হওয়ার পথে। করোনার কারণে গণস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে পড়ে এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক চাহিদা লক্ষণীয়। তবে আশার কথা, করোনার এই মহামারীতে ভরসার জায়গা তৈরি করেছে দেশের কৃষিশিল্প। আগামী অর্থবছরের বাজেট পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য খাত ও কৃষি খাত বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। গণমুখিতা সর্বজনীন বাজেটের একটি অপরিহার্য অংশ, যা সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সম্প্রসারণের দাবি রাখে। এ বছরের বাজেটে উন্নয়নের সঙ্গে পিছিয়ে পড়া শিল্প ও গোষ্ঠীকে টেনে তোলার কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরুদ্ধারসহ ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে স্টার্টআপ ও এসএমই শিল্পের জন্য প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, কভিড পরিস্থিতি মোকাবিলার সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ। আইওটিনির্ভর সক্ষম মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশেষ অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। তাই শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অপরিহার্য। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত শিক্ষাব্যবস্থা করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন টেকনোলজির মাধ্যমে শিক্ষাদান কার্যক্রম গ্রহণ করে, যা নানা সংকট অতিক্রম করে চলমান আছে। তবে একটি রিসিলেন্ট শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন, প্রয়োজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক, যা শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দের সম্প্রসারণের দাবি রাখে। ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নের ফলে করোনা মহামারীর মধ্যেও ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনাকাটা, ব্যবসা-বাণিজ্য, নতুন স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা, সরকারি সেবা, এমনকি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং আইসিটিনির্ভর কমিউনিকেশন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির সফল প্রয়োগের জন্য লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি, দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা ও আইসিটি সক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে এ খাতকে গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

এই অধ্যাপক বলেন, ‘শুধু একটি অর্থ পরিকল্পনা নয়, বাজেটের শতভাগ বাস্তবায়ন এবং বাজেটে বরাদ্দ ও ব্যয়ের আঞ্চলিক বৈষম্য রোধ ও সমতার নীতির প্রতিফলন হোক তা প্রত্যাশা করি। আশা করি এ বছরের বাজেট দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের অভিযাত্রায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।’

সর্বশেষ খবর