রবিবার, ৩০ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ছড়িয়ে পড়ছে করোনার ভারতীয় ধরন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্ত সাতজন ভারত ভ্রমণ করেননি, স্থানীয়ভাবে ছড়াচ্ছে ভারতীয় ধরন

জয়শ্রী ভাদুড়ী, ঢাকা ও মো. রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সীমান্ত এলাকায় বাড়ছে করোনার ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাতজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনটি শনাক্ত হয়েছে। তাদের ভারত ভ্রমণের কোনো ইতিহাস নেই। আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংস্পর্শে আসায় স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত দেশে ২৩ জনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরনটি শনাক্ত হয়েছে। গত শুক্রবারেই ১৩ জনের শরীরে ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, নতুন যে ১৩ জনের দেহে করোনাভাইরাসের ওই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাতজন। তাদের কারও ভারত ভ্রমণের ইতিহাস নেই। তারা স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন। বাকি ছয়জন ভারত ভ্রমণ করেছেন।’

করোনাভাইরাসের এ ধরনটির আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭। মিউটেশনের কারণে এর তিনটি ‘সাব টাইপ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া গেছে বি.১.৬১৭.২ ধরনটি। বিশ্বের প্রায় ৪৮টি দেশে করোনাভাইরাসের বি.১.৬১৭ ধরনটি ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনটিকে চিহ্নিত করেছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ (ভিওসি) হিসেবে। দেশের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত সোমবার সাত দিনের ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

গত ১৯ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত সোনামসজিদ চেকপোস্ট দিয়ে ৮৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক দেশে প্রবেশ  করেছে। এদের মধ্যে করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের জেলা হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, ভারত ফেরতদের সবাইকে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। করোনা শনাক্ত হলে জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ৪২ জনের জিনোম সিকোয়েন্স নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে। আজ রবিবার থেকে চাঁপাইনাবগঞ্জে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হবে বলেও জানান তিনি। গত ২৪ ঘণ্টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৭৭ জনের। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনায় মারা গিয়েছেন ৩২ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে আশঙ্কাজনকভাবে সংক্রমণ বাড়ছে। জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ টার্গেটেড আরটি-পিসিআর করে কমিউনিটিতে ভ্যারিয়েন্ট সার্ভাইল্যান্স করছে। অথচ আমরা এখনো নির্ভর করছি জেনোম সিক্যুয়েন্সিংয়ের ওপর। জেনোম সিকুয়েন্সিং ধীরগতির এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সব জানা মিউটেশনই হচ্ছে স্পাইক প্রোটিনে। ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশন কোথায় এটা এখন জানা। ওই মিউটেশনের একটি পয়েন্টকে টার্গেট করে সিম্পল আরটি-পিসিআরের মাধ্যমেই কয়েক ঘণ্টার ভিতরেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্যের পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড আরটি-পিসিআর এর মাধ্যমে ‘এস-জিন ড্রপআউট’ নির্ণয়ের মাধ্যমে দ্রুতগতিতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করছে। কানাডাতে আরটি-পিসিআর এর মাধ্যমে ‘এস-জিন ড্রপআউট’ নির্ণয়ের মাধ্যমে দ্রুতগতিতে ‘ইউকে’ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেছে। শুধু বাংলাদেশেই এই রকম একটা স্মার্ট, সহজ এবং সস্তা পদ্ধতিতে ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে না। অজানা মিউটেশন নির্ণয়ের জন্য জেনোম সিকুয়েন্সিংয়ের বিকল্প নেই। জানা মিউটেশন খোঁজার জন্য জেনোম সিকুয়েন্সিং না করে টার্গেটেড পিসিআর করাই যুক্তিযুক্ত। সব ধরনের মিউটেশন ডিটেকশনের কিটও এখন রয়েছে হাতের নাগালে। তবু আমরা জটিল পথে হাঁটছি।

সর্বশেষ খবর