সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

পাবনার গণপূর্তের ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনায় গণপূর্ত ভবনে অস্ত্র নিয়ে ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতাদের মহড়ার ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে পুলিশ অস্ত্র দুটি জব্দ করে সদর থানায় নিয়ে আসে। তবে আলোচিত এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও গণপূর্ত বিভাগের অভিযোগ না থাকায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ জানায়, ৬ জুন দুপুরে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাজী ফারুক, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন এবং জেলা যুবলীগের আহ্‌বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালুর নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে গণপূর্ত ভবনে আসে। আগতরা বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমকে খুঁজতে থাকেন। তারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েই উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের কক্ষে যান এবং কিছুক্ষণ পর তারা বের হয়ে যান। লিখিত অভিযোগ না থাকলেও পুলিশ নিজ উদ্যোগে ঘটনা তদন্তে নামে। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন হলে জেলাজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি জব্দ করে। তবে শোডাউন নয়, নিরাপত্তার স্বার্থে অস্ত্র ও গুলি বহন করছিলেন বলে দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের। তদন্তে অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান জানান, ৬ জুন দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন ওরফে হাজী ফারুক, এ আর খান মামুন ও শেখ লালুর নেতৃত্বে ৮-৯ জনের একটি দল ফিল্মি স্টাইলে শহরের ছাতিয়ানীতে অবস্থিত পাবনা গণপূর্ত অফিসে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে মামুন ও লালুর শটগান ছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে গণপূর্ত বিভাগ অভিযোগ না করায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে পাবনা সদর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। এদিকে বিষয়টি নিয়ে গতকাল গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওঠে নিন্দার ঝড়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতারা বিব্রত হলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকায় দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি বলেন, ‘এটি দলীয় কোনো বিষয় নয়। ঠিকাদার নেতাদের বিরুদ্ধে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা আমার কাছেও কোনো অভিযোগ করেননি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’ পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তাকে জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে প্রতিকার বা ব্যবস্থা নিতে বলা হয়নি।

পেশি শক্তির নগ্ন প্রকাশ পাবনার গণপূর্ত কার্যালয়ে : টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, পাবনা গণপূর্ত কার্যালয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মহড়া সরকারদলীয় কর্মীদের পেশি শক্তির নগ্ন প্রকাশ। দেশের সরকারি ক্রয় ও নির্মাণকাজে বহুদিন ধরে প্রচলিত অবৈধ বলপ্রয়োগ, ভয়-ভীতির মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেওয়া এবং অস্ত্রের মুখে প্রতিযোগিতামূলক কাজ বণ্টন প্রভাবিত করার আরেকটি প্রকাশ্য উদাহরণ। অবিলম্বে এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। গতকাল এক বিবৃতিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, সরকারি ক্রয়, নির্মাণকাজ এবং প্রাতিষ্ঠানিক নানা কর্মকান্ডে স্বচ্ছতার জন্য প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডারব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। সরকারদলীয় নেতা-কর্মী ও স্বার্থান্বেষী মহলের অবৈধ বলপ্রয়োগ, হুমকিধমকি এবং জবরদখলে দীর্ঘদিন ধরেই তা অকার্যকর হয়ে আছে। এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, প্রদর্শনকৃত অস্ত্রগুলো যদি বৈধ হয়েও থাকে, তবুও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতরে জনসম্মুখে এভাবে অস্ত্র প্রদর্শন করে ভীতি সঞ্চার করা আইনসিদ্ধ হতে পারে না। তাই এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বলা যায়। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, স্বাভাবিকভাবে এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। তাই আইনি প্রশ্নগুলোর সমাধানের পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ত্বরিত ও কার্যকর তৎপরতার দাবি জানাই। সরকারি দলসংশ্লিষ্ট হিসেবে এই অস্ত্র মহড়ার কুশীলবরা ছাড় পেয়ে গেলে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বিষাক্ত সাপের মতো সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়বে।

সর্বশেষ খবর