মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ই-কমার্সের আড়ালে এমএলএম নয়

বাতিল হবে নিবন্ধন, ডিজিটাল কমার্স কর্তৃপক্ষের প্রধান হবেন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা

মানিক মুনতাসির

ই-কমার্সের (অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য) আড়ালে কেউ নিষিদ্ধ-ঘোষিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা করলে সেই প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হবে। এ ছাড়া ই-কমার্স কোম্পানি খুলতে হলে অবশ্যই তাকে নিবন্ধন নিতে হবে। ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন), ট্রেড লাইসেন্সসহ আয়কর ফাইল আপডেট না থাকলে আবেদনকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন পাবে না। এমনকি গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতি করলে জেল-জরিমানার বিধান যুক্ত করে ডিজিটাল বা ই-কমার্স পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ডিজিটাল কমার্স কর্তৃপক্ষ গঠনেরও কাজ শুরু করেছে সরকার।

এ ছাড়া নিবন্ধন ফরমের কার্পকপি চূড়ান্ত করে সরকারের ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের ডেভেলপার হিসেবে পরিচিত এ-টুআই প্রকল্পের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা এর একটি সফট ভার্সন তৈরি করবে। এরপর এটির আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ই-কমার্স কমিটির চেয়ারম্যান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ফরমটি চূড়ান্ত করেছি। আশা করা হচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’ এদিকে ডিজিটাল কমার্স কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসেবে সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার অন্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো সরকারের সাবেক কোনো সচিবকেও বসানো যেতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে এর কোনোটিই এখনো চূড়ান্ত নয়। চূড়ান্ত করার আগে আরও অনেক যাচাই-বাছাই ও পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে ই-কমার্স নীতিমালা, ২০১৮ সংশোধন করেছিল সরকার, যা কার্যকর হলেও ঠেকানো যায়নি ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর প্রতারণা ও জালিয়াতি। সম্প্রতি দুটি প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে হাজার কোটি টাকারও বেশি খুইয়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে নতুন আইন করার পাশাপাশি জনসাধারণকে অধিক সচেতনতা অবলম্বনেরও পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র জানায়, ই-কমার্স খাতের উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কী করণীয় ঠিক করতে সরকার একটি উচ্চপর্যায় কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি দুই মাসের মধ্যে ডিজিটাল বা ই-কমার্স পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করার উপযোগী একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করবে এবং দুই মাসের মধ্যে ডিজিটাল কমার্স কর্তৃপক্ষের কাঠামো ও কার্যপ্রণালি তৈরি করার কার্যকর উদ্যোগ নেবে। এ ছাড়া আগামী ছয় মাসের মধ্যে আইনটি সংসদে পাস করা হবে। ই-কমার্স অথরিটির কাঠামো ঠিক করে তার যাত্রাও শুরু হবে এ সময়ের মধ্যে। সূত্র জানায়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কী ধরনের পণ্য নিয়ে কারবার করতে পারবে, কতটুকু লাভ করতে পারবে, কত দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে, সঠিক সময়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে এসব ইস্যুর সম্ভাব্য সমাধানসহ কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি প্রতারণা বা জালিয়াতি করলে কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত করে এ আইনটির খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে। ডিজিটাল কমার্স নিয়ন্ত্রণ অথরিটির কাছে সব ধরনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর। গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে কোম্পানির কার্যক্রম স্থগিত করা, বন্ধ করে দেওয়া বা কোনো কোম্পানিতে প্রশাসক বসানোর মতো ক্ষমতাও থাকবে ডিজিটাল কমার্স নিয়ন্ত্রণ অথরিটির হাতে, যা আইন দ্বারা সিদ্ধ করা হবে। এ জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডিজিটাল কমার্স নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও অথরিটি গঠনের কাজ শুরু করেছে সরকার।

এদিকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে (ডিএনসিআরপি)। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডিএনসিআরপি একটি সরকারি সংস্থা, যার দেশব্যাপী অফিস রয়েছে, বিশেষ করে সবগুলো জেলায়। এ জন্য এই সংস্থার অধীনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া ছেড়ে দিলে নিবন্ধন দেওয়া, নিবন্ধন-সংক্রান্ত তথ্য ও সেবা দেওয়া এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিচালনা করাটা অনেক সহজ হবে। তবে এ ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের লোকবল, কারিগরি সক্ষমতা, দক্ষতা ও অফিসগুলোর পরিধি অনেক ক্ষেত্রে বাড়ানোর প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এতে ডিএনসিআরপি দেশের যে কোনো প্রান্তে অবস্থিত ই-কমার্স শপগুলোতে সরাসরি নজর রাখতে সক্ষম হবে।

এদিকে একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফরম নিবন্ধনের জন্য আবেদনপত্র শিগগিরই ছাড়া হবে। এ লক্ষ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় একটি ‘সুরক্ষিত নিবন্ধন অ্যাপ’ তৈরি করছে। এ বিষয়ে ১২ নভেম্বরের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে গঠিত ১৮ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি। গতকাল কমিটি এ নিয়ে বৈঠক করেছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর