মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রমের ৮০ ভাগই একজনের নিয়ন্ত্রণে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দাওয়াতি শাখার প্রধানকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে জঙ্গিদের অনলাইন কার্যক্রম অন্তত ৮০ ভাগ বন্ধ করা গেছে বলে দাবি করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

রবিবার রাজধানীর আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে হাসিবুর রহমান নামের ওই শাখাপ্রধানকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি। জানা গেছে, হাসিবুরের বাড়ি পটুয়াখালীর মহীপুরে। তিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এলএলবি প্রথম বর্ষের ছাত্র।

গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের                  (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, হাসিবুর ফেসবুকে আযযাম আল গালিব নামে আনসার আল ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় মাঠপর্যায়ে জঙ্গিরা আগের মতো সংগঠিত নয়। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে দাওয়াতি কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করে। সে ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচার শুরু করেন সংগঠনটির নেতারা। শরিয়া আইন প্রণয়ন করে আনসার আল ইসলামের মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যবস্থা চালু করতে বিভিন্ন উগ্রবাদী বক্তব্য ও জিহাদের কথা বলে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিতেন। এ ধরনের পোস্ট দেওয়ার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে উগ্রবাদে জড়াতে উদ্বুদ্ধ করে র‌্যাডিকালাইজ করাই ছিল হাসিবুরের দায়িত্ব। হাসিবুর নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকা অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজে পড়ার সময় জঙ্গিবাদের আদর্শ ধারণ করেন। প্রথমে ফেসবুকের মাধ্যমে ও আন্তর্জাতিক সহিংস উগ্রবাদী সংগঠন আল-কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী আইডি জামিল হাসান, জামসেদ হোসেন আইডি দুটির সঙ্গে যুক্ত হন। আইডিগুলোতে তালেবান ও আল-কায়েদার বিষয়ে বিভিন্ন লেখা ও সংবাদ প্রচার করত বলে জানান তিনি। সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, হাসিবুর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, সংবিধান, রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারে আযযাম আল গালিব নামের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতেন। এমনকি একই নামে বিভিন্ন মাধ্যমে আইডি খুলে তিনি এসব প্রচার করতেন। দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার সময় হাসিবুরের সঙ্গে টেলিগ্রামে যোগাযোগ হয় জায়েদ ইবনে আলী ও শাফায়েত মুসান্না ইসা নামের দুটি আইডির। তারাও একই মতাদর্শ প্রচারের সঙ্গে জড়িত। জায়েদ ইবনে আলী নামের টেলিগ্রাম আইডিটি ছদ্মনাম ব্যবহার করে আল আমিন সিদ্দিকী ও শাফায়েত মুসান্না ইসা আইডিটি ছদ্মনামে নারী জঙ্গি জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা পরিচালনা করতেন। আগে আলাদা দুই অভিযানে তাদের দুজনকেই গ্রেফতার করে সিটিটিসি। আনসার আল ইসলামের দাওয়াতি শাখার প্রধানকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে তাদের অনলাইন কার্যক্রম প্রায় শেষ করে দেওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে অনলাইনে সুসংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। দাওয়াতি শাখার এই তিনজনকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আমরা তাদের সেই চেষ্টাকেও নস্যাৎ করতে সফল হয়েছি। আমাদের ধারণা, এর মধ্য দিয়ে জঙ্গিদের অনলাইন কার্যক্রম অন্তত ৮০ ভাগ বন্ধ হয়ে যাবে।’ এদিকে গতকাল মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাবলিক রিলেশন্স অ্যান্ড স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্সের এডিশনাল ডিরেক্টর আবদুল মতিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হাসিবুর রহমান তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি প্রথম সেমিস্টারে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করে। ছবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অসম্পূর্ণ থাকায় তার ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। বিধিমতে সে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রত্ব লাভ করেনি। উপরন্তু তার ভর্তি আবেদন কর্তৃপক্ষ বাতিল করেছে।

সর্বশেষ খবর