বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জবাবদিহিতাহীন পর্যায়ে সিটি করপোরেশন

-স্থপতি ইকবাল হাবিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

জবাবদিহিতাহীন পর্যায়ে সিটি করপোরেশন

নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেছেন, মেয়র থাকাকালে আনিসুল হক দেখিয়েছিলেন যানজট নিরসন করেও নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলা সম্ভব। আর এই বাড়তি দায়িত্ব এখন বর্তমান মেয়রদের ওপর পড়েছে। কিন্তু এই মেয়ররা তাদের আসল কাজই তো করছেন না, বাড়তি কাজ করবেন কখন। এ পরিস্থিতির জন্যই মনে করি সিটি করপোরেশনগুলো জবাবদিহিতাহীন পর্যায়ে পড়ে গেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে স্থপতি ইকবাল হাবিব আরও বলেন, সিটি করপোরেশনগুলোর প্রথম সংকট হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা। তা মশক নিধন হোক, পথচারীবান্ধব মানবিক নগর হোক অথবা জলযটমুক্ত সিটি প্রতিষ্ঠা হোক। এই তিনটি খাতের বাইরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এর অর্থ এই তিনটি কাজের প্রতিটিতে যদি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তরল অথবা কঠিন যথাযথ না হয় তাহলে এর প্রভাব জলজে পড়বে। কারণ নগরীর খালগুলো উদ্ধার করা যাচ্ছে না। সেখানে তরল নিকোষ কালো পয়ঃবর্জ্যরে ধারা বয়ে যাচ্ছে। দখলের কারণে সেখানে মশার আভাসস্থল হচ্ছে। একটির সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত। এই কাজগুলোর ব্যাপারে আমরা এখন পর্যন্ত ধনীতোষণ ছাড়া কিছুই দেখি না। যেমন- ধনীদের এলাকায় ফুটপাথ ঠিক করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা এবং মশার ওষুধ দেওয়া হয়। অথচ বেশি সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য যা দরকার সেটি হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের আবাসস্থলে নজর দেওয়ার। কার্যত সেটি হচ্ছে না। এক্ষেত্রেও বৈষম্য হচ্ছে। এই নগরপরিকল্পনাবিদ বলেন, রাজউকের চিন্তাভাবনা দেখে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতেও তারা ধনী মানুষের জন্য উঁচু ভবন নির্মাণের অনুমতি দেবে। অভিজাত এলাকা বারিধারায় যেখানে সাত-আটতলা ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে বিপরীতে বাড্ডায় দুই তলার বেশি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, কার্যত খুব বেশি কাজ সিটি করপোরেশনের নেই। নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখা, মশক নিধন এগুলো সিটি করপোরেশনের প্রধান কাজ। কিন্তু এই কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে না করে মেয়ররা অন্যান্য কাজে মনোনিবেশ করছেন।

বিশেষ করে মার্কেট তৈরি বা শপিং সেন্টারে তাদের আগ্রহ অনেক বেশি। মূল কথা হচ্ছে সিটি করপোরেশনের চরিত্রই হলো সেবা দান করা। এটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়। ইকবাল হাবিব বলেন, নাগরিক সেবাগুলো গুলশান, বনানী ও বারিধারায় দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য এলাকায় এ কাজগুলো হচ্ছে না। ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পনা গুছিয়ে যদি বটম আপ করা যেত তাহলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারতাম।

একইসঙ্গে এই কাজে জনসম্পৃক্ততা তৈরি করা গেলে পুরো পরিস্থিতি বদলে যাবে। আর বদলে যাওয়ার ক্ষেত্রে ধনী তোষণ থেকে সরে এসে স্থানীয় সরকারকে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। যারা অতিমাত্রায় সুবিধাগুলো ভোগ করছে এবং যারা ধনী তাদের কাছ থেকে ট্যাক্স নিয়ে যারা পাচ্ছে না যেমন- মিরপুর, কামরাঙ্গীরচরের উন্নয়নে দিতে হবে। জরিপ করে নতুন ট্যাক্সসেশন করা হোক। আর এক্ষেত্রে নতুন এই ট্যাক্সের টাকায় শিশু, নারী-শিশু, তরুণ, বয়োবৃদ্ধ, নারী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা প্ল্যান করা গেলে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ঢাকা সিটি বদলে যাবে।

সর্বশেষ খবর