শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নামমাত্র ভাতা, নেই কাজের সুযোগ

আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস আজ

জিন্নাতুন নূর

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার আজোয়াটারী গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যুবক মো. শাহানুর রহমান। এক চোখে সমস্যা নিয়েও স্নাতক পাস করেন। এরপর শিক্ষকতা করার ইচ্ছা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে চাকরির জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু তিন বছর ঘুরেও কোথাও চাকরি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত পল্লী চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে যা আয় করেন তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন। প্রতিবন্ধী ভাতা পান কিনা জানতে চাইলে শাহানুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কয়েক মাস পরপর ভাতার টাকা দেওয়া হয় কিন্তু ভাতার পরিমাণ এতই কম যে এই বাজারে এই টাকায় আমাদের মতো মানুষের খুব কষ্ট হয়ে যায়। শাহানুর শুধু একা নন। তার মতো অসংখ্য প্রতিবন্ধীর অভিন্ন অবস্থা। তাদের অভিযোগ, মাসে মাত্র ৭৫০ টাকা দিয়ে বর্তমান বাজারে চলা সম্ভব নয়। তারা জানান, দেশে তাদের জন্য বিভিন্ন আইন থাকলেও বাস্তব জীবন অনেক কঠিন। কষ্ট করে অনেকে লেখাপড়া করলেও চাকরি পেতে তারা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হবে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস।

প্রতিবন্ধীদের ভাতা ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে বিভিন্ন গবেষণাতেও উল্লেখ করা হয়েছে। টিআইবির ‘উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তি এবং প্রতিবন্ধিতা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ অর্থ বাস্তবসম্মত ও যথেষ্ট নয়। আবার তাদের জন্য যে বরাদ্দ তাও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে যথাযথভাবে তাদের কাছে পৌঁছায় না। এতে বলা হয়, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর নিয়মিত তদারকি ও নিরীক্ষা না হওয়ায় সেবা প্রদান কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় বাজেটে সংশ্লিষ্ট খাতের  জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদাভাবে বরাদ্দ রাখা হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ব্যয় হলেও সেটা এ খাতের প্রকৃত বরাদ্দ কিনা তা স্পষ্ট নয়। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় মাসে ৭৫০ টাকা করে প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। যা জীবনধারণের চাহিদা পূরণে অত্যন্ত কম।

সমাজসেবা অধিদফতরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৮ জন। আর ন্যাশনাল ফোরাম অব অর্গানাইজেশনস ওয়ার্কিং উইথ ডিসঅ্যাবিলিটিস-এর এক গবেষণায় বলা হয় যে, মোট প্রতিবন্ধীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি খাতে চাকরি করছে আর ১৭ শতাংশ বিভিন্ন বেসরকারি খাতে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ফর দ্য ফিজিক্যালি ভালনারেবল এক গবেষণায় বলছে, ৫০ শতাংশ প্রতিবন্ধী মেয়ে নিরক্ষর। আর এই নারীদের আর্থিকভাবে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজন কর্মসংস্থান। কিন্তু বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের কাজের যথেষ্ট পরিসর থাকলেও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রতিবন্ধীরা বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানা, ওষুধ কোম্পানি, সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এবং সিএনজি এবং রিকশাচালক হিসেবে কাজ করছেন।

 

 এ ছাড়া সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, মৈত্রী শিল্পে দেশের প্রতিবন্ধীরা প্লাস্টিক কারখানায় উন্নতমানের নিত্য ব্যবহার্য জগ, মগ, বালতিসহ প্রায় ৭০ ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদন করছে। এ ছাড়া ঢাকা ওয়াসার মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদনের কাজেও তারা জড়িত। বর্তমানে এই পানি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, পর্যটন করপোরেশনে অফিশিয়াল পানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর