শনিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বায়ুদূষণে গড় আয়ু কমছে সাত বছর

-ডা. লেলিন চৌধুরী

বায়ুদূষণে গড় আয়ু কমছে সাত বছর

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেছেন, বায়ুদূষণ বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে শুধু বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু সাত বছর কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ, শুধু বায়ুদূষণ  নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এখন গড় আয়ু যেখানে ৭২ বছর, তা হয়ে যেত ৭৯ বছর। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বায়ুদূষণ বাংলাদেশে অন্যতম একটি পরিবেশ সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমরা দেখছি শীতকালে যখন বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, তখন ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব নগরীতে বায়ুদূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। বিশ্বের সর্বাধিক দূষিত নগরীর তালিকায় এক থেকে চারের মধ্যে থাকে ঢাকার অবস্থান। এই বায়ুদূষণের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। প্রথমে শুরু হয় শ্বাসতন্ত্রের রোগ দিয়ে। যেমন- হাঁচি, কাশি, সর্দি, শ্বাসের টান বা হাঁপানি, অ্যালার্জিক কফ, অ্যালার্জিক অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ফুসফুস ক্যান্সারের মতো রোগগুলো হয়। অন্যদিকে বায়ুতে ভাসমান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) শ্বাসতন্ত্র দিয়ে রক্তস্রোতে মিশে গিয়ে লিভার, কিডনিসহ বিপাক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। ফলে কিডনি বিকল, লিভার বিকলসহ নানা জাতীয় ক্যান্সার বাড়ছে। এক বায়ুদূষণের কারণে সংক্রামক-অসংক্রামক দুই ধরনের রোগই বাড়ছে। তিনি বলেন, আমাদের গড় আয়ু বাড়ছে এটা ঠিক। কিন্তু, এই গড় আয়ুর কতটা সময় আমরা ডাক্তারের চেম্বার, হাসপাতালের শয্যায় কাটিয়ে দেই সেই হিসাবটা রাখি না। বায়ুদূষণজনিত কারণে রোগাক্রান্ত হয়ে কত টাকা খরচ করি সেই হিসাব রাখি না। বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যখাতে যে খরচ বাড়ছে তার একটা হিসাব হওয়া দরকার। একইসঙ্গে দূষণের কারণে জাতীয়ভাবে প্রতি বছর কত বিলিয়ন শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে তারও হিসাব হওয়া দরকার। তাহলে বোঝা যাবে এই বৃদ্ধি পাওয়া গড় আয়ুর কতটা অংশ মানুষ রোগী হিসেবে পার করছে, আর কতটা অংশ ভোগ করতে পারছে। ডা. লেলিন বলেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণে উচ্চ আদালত অনেক নির্দেশনা জারি করলেও সেগুলো বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আবহাওয়া অধিদফতর প্রতিদিন ঝড়-বৃষ্টি ও শীতের তথ্য ও পূর্বাভাস দেয়। অথচ, বহুদিন ধরে আমরা দাবি করে আসছি- বায়ুদূষণের মাত্রাটা নিয়মিত জানানো হোক, পরের দিনের সম্ভাব্য দূষণমাত্রার আগাম বার্তা দেওয়া হোক। এটা হলে মানুষ পরিস্থিতি বুঝে মাস্ক ব্যবহার বা অন্য ব্যবস্থা নিতে পারবে। দূষণ বেশি হলে শিশু-বৃদ্ধের মতো সংবেদনশীল মানুষকে আমরা ঘরে থাকতে বলতে পারি। এটা করলে দূষণে স্বাস্থ্যক্ষতি কিছুটা কমানো যেত। কিন্তু, আবহাওয়া অধিদফতর তা করছে না। দূষণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যে সংস্থাগুলোর, তাদের তেমন ভূমিকাই রাখতে দেখছি না। বরং, এটা নিয়ে যখনই আলোচনা হয়, তখন তারা বলে অচিরেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। এই অচিরের অবসান কবে হবে তা আমরা জানি না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর