মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
ঈদের ছুটি

ক্ষতি কাটিয়ে জমজমাট পর্যটন

জিন্নাতুন নূর

ক্ষতি কাটিয়ে জমজমাট পর্যটন

করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই ঈদে বিধিনিষেধ থাকায় ভ্রমণপিপাসুরা অনেকটা ঘরবন্দি কাটিয়েছেন। ঈদ মৌসুমে পর্যটন খাতের পালে হাওয়া লাগার কথা থাকলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু সামাজিক বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় এবার ঈদ মৌসুমে পুরনো চেহারায় ফিরতে শুরু করেছে পর্যটন খাত। এরই মধ্যে জমে উঠেছে বিকাশমান খাতটি। বিভিন্ন দেশে করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে পড়ায় দেশীয় ট্যুর অপারেটর কোম্পানিগুলো নানা রকম ভ্রমণ প্যাকেজ দিচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না অভ্যন্তরীণ প্যাকেজও। এরই মধ্যে পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঈদে পর্যটক টানতে তাদের প্রস্তুতি শেষ করেছে। দেশের বাইরে এবার বিপুল পরিমাণ পর্যটক ঈদ করতে যাচ্ছেন। শুধু পাশের দেশ ভারতেই এবার বাংলাদেশ থেকে ঈদে যাচ্ছেন ৫ লাখ মানুষ। করোনাকালে এরই মধ্যে পর্যটন খাতে ৬০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। করোনা না থাকলে দেশের অর্থনীতিতে এ খাত থেকে আরও ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আসত। কিন্তু এর পরও এই সময়ে পর্যটন খাত থেকে এসেছে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে কাজ হারিয়েছেন ১ লাখ ৪১ হাজার শ্রমিক। পর্যটন খাত পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোয় কাজ হারানো মানুষগুলোও আবার কাজে ফিরেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার ঈদে সমুদ্রনগরী কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমাগম হবে বলে হোটেল মালিক ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন। কক্সবাজারের হোটেল মালিকরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ঈদে ছুটি কাটানোর জন্য এরই মধ্যে অগ্রিম বুকিং শুরু হয়েছে। সমুদ্র নগরীর পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ পর্যটকদের স্বাগত জানাতে এখন অপেক্ষা করছে। টানা ছুটিতে এবার ঈদের আগে ও পরে লাখো পর্যটকের সমুদ্রনগরীতে সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, বাংলাদেশের পর্যটকদের ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া শুরু করেছে। দুই বছর বিরতির পর ভারত ভ্রমণের জন্য দেশের পর্যটকদের যেন আর তর সইছে না। পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের তথ্যে, ঈদের ছুটিতে এবার কমপক্ষে ৫ লাখ বাংলাদেশি ভারত ভ্রমণে যাবেন। যেহেতু এবার ঈদে এক সপ্তাহের বেশি ছুটি কাটানোর সুযোগ রয়েছে, এই ছুটিকে উপভোগ করতে আগেভাগেই ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ও বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর কোম্পানি ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করেন। গরম থাকায় ছুটি কাটাতে এবার অনেকেই ভারতের দার্জিলিং, সিকিম ও কাশ্মীর যাচ্ছেন। কেউ কেউ বৃষ্টি উপভোগ করতে যাচ্ছেন মেঘালয় রাজ্যে। এ ছাড়া ঈদের শপিং সারতে এরই মধ্যে অনেকেই কলকাতায় গিয়েছেন। রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসিন্দা রুমি আক্তার বলেন, ‘আমরা এক যুগের বেশি সময় ধরে প্রতি রমজানেই ঈদের শপিং করতে কলকাতায় যাই। করোনায় দুই বছর যেতে পারিনি। কিন্তু এবার বেশি করে শপিং করে এসেছি।’

ভারত ছাড়াও মালদ্বীপে এখন বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক পর্যটক যাচ্ছেন। এই ঈদে নীল জলরাশির এই সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি এখন আকাশপথে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকায় পর্যটকরা নিজ উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন ভ্রমণ প্যাকেজেও মালদ্বীপ যাচ্ছেন। দেশের বাইরে ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয় আরেকটি দেশ নেপাল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের অনেকে এবার হিমালয়কন্যার দেশে যাচ্ছেন। এ ছাড়া দেশের মধ্যে সিলেট, কুয়াকাটা, সাজেক, রাঙামাটি, সুন্দরবন ও বান্দরবানসহ অন্য পর্যটন পকন্দ্রগুলোতে ঈদে এবার পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। দেশীয় বিভিন্ন ট্যুর কোম্পানি ঈদের পরে পর্যটকদের বিভিন্ন প্যাকেজে এসব স্থানে ঘোরাতে নিয়ে যাচ্ছে।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি রাফিউজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এবার ঈদে আমাদের সদস্যরা ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিসর, দুবাই, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের প্রচার চালিয়েছে। তবে ভারতে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ যাচ্ছেন তাদের সবাই পর্যটক নন। এদের কেউ আত্মীয়ের কাছে যাচ্ছেন আবার কেউ যাচ্ছেন চিকিৎসা করাতে। বর্তমানে আমরা দেশীয় পর্যটন খাতের বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি আর দেশের পর্যটনের খাতও এখন বেশ ভালো অবস্থায় আছে। দেশের রাজস্ব ধরে রাখতে আমরা দেশীয় পর্যটন খাতের বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।’

 

সর্বশেষ খবর