বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রশ্ন ফাঁসসহ পরীক্ষায় অপরাধের মামলা

ঢাকায় ১৪ বছরে সাজা একজনের

আরাফাত মুন্না

ঢাকায় ১৪ বছরে সাজা একজনের

প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ পাবলিক পরীক্ষায় নানা ধরনের অপরাধের ঘটনায় মামলা হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা যাচ্ছে না। ফলে পার পেয়ে যাচ্ছেন আসামিরা। ২০০৯ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত ১৪ বছরে ঢাকা মহানগর এলাকায় এসব ঘটনার দুই শতাধিক মামলা হলেও নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৪৫টি। আর মাত্র একটি মামলায় সাজা হয়েছে একজন আসামির। নিষ্পত্তি হওয়া বাকি সব মামলার আসামিরাই অব্যাহতি বা খালাস পেয়েছেন। আদালত ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, ভুল আইনে মামলা দায়ের করা, সাক্ষী হাজির করতে না পারা ও তদন্তে গাফিলতির কারণে অভিযোগ প্রমাণ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, পুরনো আইনে শাস্তি নিশ্চিত করার যথাযথ বিধান নেই। ফলে পুলিশ অভিযোগপত্র দিলেও অনেক সময়ই অপরাধ প্রমাণ হয় না। তাই আইনটি যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত ঢাকার আদালতে পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত দুই শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়া ৪৫টি মামলার মধ্যে ৪৪টিতেই কোনো আসামির সাজা হয়নি। এসব মামলার মধ্যে ১৮টির আসামিরা অভিযোগ গঠনের আগেই অব্যাহতি পান। ১৫টিতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ১১টিতে আদালত পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের পর আসামিরা খালাস পান। এ ছাড়া নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের করা মামলা রয়েছে পাঁচটি। পরীক্ষার্থীকে লিখিত কাগজ সরবরাহ এবং মৌখিক বা যান্ত্রিক উপায়ে সহায়তা করার অভিযোগে মামলার সংখ্যা ৩১। প্রকৃত পরীক্ষার্থী না হয়েও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অপরাধের মামলা রয়েছে ছয়টি। আর ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরির অভিযোগের মামলার সংখ্যা ৩টি। জানতে চাইলে মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের মামলা দায়ের ও তদন্তে বেশ কিছু সমস্যা আমরা পেয়েছি। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সাজা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অনেক সময়ই দেখা যায় পুলিশ ভুল আইনে মামলা দায়ের করছে। দেখা যাচ্ছে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের মামলা হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষা আইনে। ফলে কিছু সমস্যা তো রয়েই যায়। সাক্ষীর বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময়ই দেখা যায় সাক্ষীরা আসেন না। আবার সাক্ষী দিতে যারা আসেন তারাও আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় উল্টাপাল্টা বলেন। অর্থাৎ সাক্ষীরা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে বক্তব্য দেন সেটি কোনো কারণে তারা আদালতে দেন না। ফলে আসামিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মো. ফারুক হোসেন বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় যে আইন আছে তাতে আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আইনটি অনেক পুরনো। সেখানে শাস্তির তেমন কোনো বিধান নেই। তাই আইনটি দুর্বল হওয়ায় পুলিশ চার্জশিট দিলেও আসামির শাস্তি হয় না। তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁস রোধে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইনটি যুগোপযোগী করে দ্রুত সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভুল আইনে মামলা : ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার সময় ধরা পড়েন ‘ভুয়া পরীক্ষার্থী’ আবিদা। এ ঘটনায় পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনের ৩(ক) ধারায় মামলা করা হয়। ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর আসামিকে অব্যাহতি দেন আদালত। রায়ে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে পাবলিক পরীক্ষাসংক্রান্ত অপরাধ হয়নি। এটি ছিল চাকরির পরীক্ষা। আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের কোনো উপাদান নেই।

দন্ড হওয়া একমাত্র মামলা : গত ১৪ বছরে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় শুধু মেহেদী শামীম নামে একজনকে অর্থদন্ড দিয়েছেন আদালত। তিনি ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ওয়্যারলেস অপারেটর পদের নিয়োগ পরীক্ষার সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, পরিচয় গোপন করে আতিকুর রহমান সেজে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার। এ ঘটনায় পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনের ৩(খ) ধারায় মামলা হয়। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর এ মামলার রায়ে আসামিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। রায়ে আদালত বলেন, আসামির বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনের ৩(খ) ধারার অভিযোগ গঠনের উপাদান নেই। তবে আসামির বিরুদ্ধে প্রতারণার (দন্ডবিধির ৪১৯ ধারা) সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামিকে অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে তিনি দোষ স্বীকার করায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত।

সর্বশেষ খবর