শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভয়াবহ বিষাক্ত ঢাকার বাতাস

তিন দিন ধরেই নাজুক পরিস্থিতি

শামীম আহমেদ

ভয়াবহ বিষাক্ত ঢাকার বাতাস

তিন দিন ধরে ভয়াবহ দূষণের কবলে ঢাকার বাতাস। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে ঢাকা ছিল বিশ্বের মধ্যে একমাত্র ‘বিপজ্জনক’ মাত্রায় দূষিত শহর। এই সময়ে ঢাকার বাতাস ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া নিরাপদ সীমার (বার্ষিক গড়) চেয়ে ৫০.৮ গুণ বেশি দূষিত। প্রতি ঘনমিটার বাতাসে দূষণের মূল উপাদান পিএম ২.৫ ছিল ২৫৩.৯ মাইক্রোগ্রাম, যেখানে দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কিরগিজস্তানের বিশকেকের বাতাসে পিএম ২.৫ ছিল ১১৩ মাইক্রোগ্রাম।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজুয়ালের রিয়েল টাইম প্রতিবেদনে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, গত এক মাসে কখনোই এতটা দূষিত হয়ে ওঠেনি ঢাকার বাতাস। ১৫ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিটা দিন ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর থাকলেও ১২ ডিসেম্বর তা চরম অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। গতকাল সন্ধ্যায় সেটা বিপজ্জনক মাত্রার দূষণে পৌঁছায়। অস্বাস্থ্যকর বাতাস থেকে রক্ষা পেতে গতকাল ঢাকাবাসীকে ঘরের বাইরে শরীরচর্চা না করা, বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখা, বাইরে মাস্ক পরা ও ঘরে বায়ু বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র চালিয়ে রাখার পরামর্শ দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি।

এয়ার ভিজুয়ালের তথ্যানুযায়ী কোনো এলাকায় বায়ু মান সূচকে (একিউআই) স্কোর ৫০-এর নিচে থাকলে তাকে স্বাস্থ্যকর ধরা হয়। স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে সহনীয়, ১০১ থেকে ১৫০ বিশেষ শ্রেণির মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ হলে অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর ও ৩০১ থেকে ৫০০ হলে তা বিপজ্জনক। গত ১৫ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ঢাকার বাতাস সবচেয়ে দূষিত ছিল ২২ নভেম্বর। সেদিন ঢাকার একিউআই স্কোর ছিল ১৯৩। ১২ ডিসেম্বর প্রথম চরম অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠার দিন একিউআই স্কোর ছিল ২০২। ১৩ ডিসেম্বর সেটা বেড়ে হয় ২৬৫। গতকাল সন্ধ্যায় দূষণ স্কোর ওঠে ৩০৪। এ সময় শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কিরগিজস্তানের বিশকেকের একিউআই স্কোর ছিল ১৮১। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় বাতাস ছিল বিপজ্জনক মাত্রায় দূষিত। এ সময় শ্রীপুরের একিউআই স্কোর ছিল ৪৪৭। প্রতি ঘনমিটার বাতাসে দূষণ উপাদান পিএম-২.৫ ছিল ৪২০ মাইক্রোগ্রাম।

প্রতি ঘণ্টায় বেড়েছে দূষণ : গতকাল বিকাল ৫টা ২৩ মিনিটে ঢাকা ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ দূষিত শহর। একিউআই স্কোর ছিল ২৬৮। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটেও দূষণে শীর্ষে ছিল ঢাকা। একিউআই স্কোর বেড়ে দাঁড়ায় ২৮২-তে। সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটেও একই অবস্থান ধরে রাখে ঢাকা। একিউআই স্কোর বেড়ে হয় ৩০৪, যা বিপজ্জনক মাত্রায় দূষিত। এ সময় দূষণে ‘বিপজ্জনক’ মাত্রার আগের ধাপ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়েও ছিল না বিশ্বের কোনো শহর। সরেজমিন গতকাল বিকালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কুয়াশার মতো ধুলা উড়তে দেখা গেছে। ধুলার কারণে সন্ধ্যার আগেই ঢেকে গিয়েছিল সূর্য। ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল আধা কিলোমিটার দূরত্বের যানবাহন। ধুলার পুরু আস্তরে ঢেকে গেছে গাছের পাতা। এ ছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুরসহ অনেক এলাকায় দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। ১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই ধুলায় পোশাকের রং পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ুদূষণ বিষয়ক গবেষক ড. আবদুস সালাম বলেছেন, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস দূষণ বাড়তেই থাকে। এই সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দূষণের উপাদান বাতাসেই রয়ে যায়। চালের তাতাল, ইটভাটা এগুলোও চলে শীতকালে। নির্মাণবিধি না মেনে বিভিন্ন নির্মাণ কাজ, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, খোলা ট্রাকে মাটি-বালু পরিবহন, ট্রাফিক জ্যামের কারণে দূষণ বাড়ছে। দূষণের উৎস বন্ধ করতে আইন আছে, শুধু বাস্তবায়নের অভাব। দূষিত বায়ুর কারণে নানা রোগ হচ্ছে। নিজেদের বাঁচাতে যতটা সম্ভব দূষণ এলাকা এড়িয়ে চলা ও মাস্ক পরা উচিত।

সর্বশেষ খবর