সোমবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

আতঙ্কে জাবি ছেড়েছে অতিথি পাখিরা!

জাবি প্রতিনিধি

আতঙ্কে জাবি ছেড়েছে অতিথি পাখিরা!

অক্টোবরের শেষ দিকে এসেছিল ওরা। ফিরে যাওয়ার কথা ছিল ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। শীতের এই ভর মৌসুমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জলাশয়গুলোতে ফুটে থাকা লাল শাপলার রাজ্যে পূর্ণ রাজত্ব থাকার কথা ছিল ওদের। কিন্তু চিত্রটা এখন সম্পূর্ণ  উল্টো। মাত্র দুই মাস না যেতেই লাল শাপলার জলাশয় এখন অতিথি পাখিশূন্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত দর্শনার্থীর ভিড় আর মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণে আতঙ্কিত হয়ে জাবির লেক ছেড়ে গেছে অতিথি পাখিরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত জাবি ক্যাম্পাসকে ঘিরে রেখেছে প্রায় এক ডজন লেক। এ বছর তাদের মধ্যে চারটি লেকে নেমেছিল অতিথি পাখিরা। এখন শুধুমাত্র একটি লেকেই পাখি আছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের এ লেকটিতে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। প্রতি বছরই শীত মৌসুমে দেশের হাওর অঞ্চল এবং সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, কাশ্মীর, হিমালয়ের আশপাশের শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে জাবির জলাশয়গুলোতে আসে অতিথি পাখিরা। তাদের জলকেলিতে ভাঙে শীতকালীন ক্যাম্পাসের হিম নীরবতার চাদর। ক্যাম্পাসের পরিবহন চত্বরের পাশের লেকটিতেই সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখি নামে। শিক্ষার্থীরা জানায়, এক মাস আগেও লেকটিতে অতিথি পাখির মেলা বসেছিল। অথচ এখন একেবারেই পাখিশূন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘এই পরিযায়ী পাখিরা অল্পতেই ভয় পায়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণে একরকম আতঙ্কিত হয়েই ওরা চলে গেছে।’

ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় জলাশয়টি অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন এলাকায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলায় পাখির আবাসস্থল হিসেবে এটি। বড় বড় কচুরিপানায় ভর্তি জলাশয়টি। সময় মতো পরিষ্কার করা গেলে অজ¯্র অতিথি পাখি বিচরণের নয়নাভিরাম দৃশ্যটি এ বছরও দেখা যেত বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার কর্মকর্তারা জানান, প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে সময়মতো জলাশয়টি পরিষ্কার এবং খনন কাজ সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়টির নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল রনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক উন্নয়ন কর্মকান্ড অপরিকল্পিত বড় বড় বিল্ডিং নির্মাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নির্বিচারে চলছে বৃক্ষনিধন। প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে প্রশাসন একেবারেই উদাসীন। এভাবে চলতে থাকলে জাবি এক সময় তার প্রাণ, প্রকৃতির ঐতিহ্য হারাবে। এ বছর অতিথি পাখিরা এসে চলে গেছে। ভবিষ্যতে হয়তো আর আসবেই না।’

সর্বশেষ খবর