রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দিনের রান্না রাতে, গ্রাহক ঝুঁকছেন এলপিজিতে

গ্যাস সংকট

জিন্নাতুন নূর

দিনের রান্না রাতে, গ্রাহক ঝুঁকছেন এলপিজিতে

টানা কয়েক মাস ধরে গ্যাস সংকটের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের আবাসিক এলাকার গ্যাসের গ্রাহকরা। শীত শুরুর সঙ্গে এই দুর্ভোগ আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাসাবাড়ি তো বটেই, এমনকি শিল্পকারখানাগুলোও গ্যাস সংকটের কারণে ধুঁকছে। গ্যাসের অভাবে দৈনন্দিন কাজের ছন্দপতন ঘটেছে। মানুষজন বাধ্য হয়ে দিনের রান্না রাতে সারছেন। গ্যাস না পেলেও গ্রাহকদের মাস শেষে গুনতে হচ্ছে বিল। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে অনেকেই ঝুঁকছেন তরলীকৃত প্যাট্রোলিয়াম গ্যাসে (এলপিজি)। গ্যাসের এই সংকট যে শিগগিরই শেষ হবে সরকারের পক্ষ থেকেও এমন ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। আর সংশ্লিষ্টরা জানান, খোলাবাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি না করা পর্যন্ত এ সংকট কাটানো কঠিন হবে।

চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই দেশে গ্যাস সংকট চলছে। সরকার ঘাটতি মেটাতে ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে। এতে সংকট কিছুটা কাটলেও ২০২১ সালের শেষে এসে ভোগান্তি বাড়ে। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেয়। ২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এই সংকট আরও বৃদ্ধি পায়। সরকার লোকসান কমাতে গত বছর জুলাই থেকে খোলাবাজারের এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেয়।

দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় থাকা কাতার ও ওমানের দুই কোম্পানিও সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে গ্যাসের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। ঢাকার অনেক বাসাবাড়িতে এখন চুলা জ্বালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের জানান, খোলাবাজার থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ থাকায় গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বাসাবাড়িতে পাইপের গ্যাসের বিকল্প হিসেবে তিনি এলপিজি ব্যবহারের কথা বলেন। ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনর রশীদ মোল্লাহ্্ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া গ্যাস সংকট এখনো অব্যাহত আছে। এর বাইরে শীতের সময় গ্যাসের চাপ এমনিতেই কম থাকে। আগে থেকে ঘাটতি এমনিতেও ছিল। আর শীতে চাপ কম হওয়ায় অন্য বছরের চেয়ে সংকট আরও বেশি তৈরি হয়েছে। দৈনিক ৩১০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি চাহিদার বিপরীতে এখন তিতাস সরবরাহ করছে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস ঘাটতি রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে। এ জন্য তিনি গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন। রাজধানীর উত্তরার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাজ্জাদ বিন শরীফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে বাসায় গ্যাসের লাইনের চাপ এতই কম যে, দিনে চুলা জ্বালাতেই পারছি না। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। উল্টো তিতাসের পক্ষ থেকে এ সমস্যা দ্রুত যে সমাধান হবে না- এমন কথাও বলা হয়েছে। উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার শুরু করেছি। এতে আপাতত কাজ সামাল দেওয়া গেলেও খরচ অনেক বেড়েছে। কারণ গ্যাস না পেয়েও ঠিকই তিতাসের গ্রাহক হিসেবে মাস শেষে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।’ শুধু বাসাবাড়িতেই নয়, গ্যাস সংকটের প্রভাব পড়েছে নগরীর হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতেও। গ্যাসের অভাবে অনেক রেস্তোরাঁর মালিক এখন বড় বড় এলপিজি সিলিন্ডার কিনছেন। যারা খরচ সামাল দিতে পারছেন না তারা কাঠের লাকড়ি দিয়ে কাজ সারছেন। আবার শীতের দিনে ঠান্ডা পানি দিয়ে শিশু ও বৃদ্ধদের গোসলে সমস্যা হওয়ায় অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। গ্যাসের চাপ কম থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সিএনাজিচালিত যানবাহনগুলোকেও। স্বল্প চাপের কারণে গ্যাস নিতে সিএনজি স্টেশনগুলোয় একটি গাড়ির আগের চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি সময় লাগছে। রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দারা জানান, আগে সকাল থেকে দুপুরের দিকে গ্যাসের চাপ কমলেও বিকালে বা সন্ধ্যায় ফিরে আসত। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ভোরের দিকে গ্যাসের চাপ কমে গিয়ে তা ফিরে আসে মাঝরাতের দিকে। এ পরিস্থিতিতে অবস্থাভেদে গ্রাহকদের কেউ লাকড়ি, কেউ ইলেকট্রিক চুলা, আবার অনেকেই এলপিজি সিলিন্ডার দিয়ে রান্নাসহ প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, টিকাটুলী, রামপুরা, মতিঝিল, মিরপুর, মগবাজার, ধানমন্ডি, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকাসহ ঢাকার আশপাশে নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, গাজীপুর, সাভারে গ্যাস স্বল্পতায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।

সর্বশেষ খবর