বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

অনির্বাচিত সরকার এলে সংবিধান অশুদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

অনির্বাচিত সরকার এলে সংবিধান অশুদ্ধ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বইমেলা উদ্বোধনের পর স্টল ঘুরে দেখেন -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশে খুব জ্ঞানী-বিজ্ঞানী আছেন। তাদের মুখে শুনলাম, দুই-চার বছরের জন্য যদি অনির্বাচিত সরকার আসে, তাহলে তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। মহাভারত অশুদ্ধ হবে না, অশুদ্ধ হবে আমাদের সংবিধান। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা এবং তৎপরবর্তী বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সংবিধান, অনির্বাচিত সরকার এলে সেটি অশুদ্ধ হবে।

গতকাল বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিকাল ৩টায় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ নূরুল হুদা ও পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান ছোটন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বইপ্রেমীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবেতদের উদ্দেশে বলেন, কারা এগুলো বলেন, সেটা আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। অনির্বাচিত সরকার তো আপনারা দেখেছেন। এখানের ছাল ওখানে নিয়ে নানাভাবে দল করার চেষ্টা করেন, রাজনৈতিক নেতাদের খারাপভাবে উপস্থাপন করে অপকর্মের চেষ্টাও করেছেন।

আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও বই উল্টে পড়ার মজাই আলাদা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ডিজিটাল যুগ। ভাষা-সাহিত্য চর্চাও আমরা ডিজিটালাইজড করতে পারি। বইগুলো ডিজিটাল ভার্সনে করতে হবে। অডিও ভার্সনও করা যেতে পারে। প্রত্যেকটা সাহিত্যকর্ম অডিও ভার্সন করতে পারলে চলতে-ফিরতেও শোনা যাবে, পড়া যাবে। সেভাবে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের চলা উচিত। যদিও বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার মজাই আলাদা। তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছি করোনা মহামারি মোকাবিলায়। সব বন্ধ থাকলেও ভিডিও কনফারেন্সে সারা দেশের সঙ্গে আমরা সংযুক্ত থাকতে পেরেছি। সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে পেরেছি। সুতরাং বইয়ের ডিজিটালাইজেশনের জোর দিতে হবে।

বাংলা সাহিত্যের মাধুর্য বিদেশিদের জানানোর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা আমাদের ভাষা। মায়ের ভাষায় আমরা কথা বলি। পাকিস্তানি শাসকরা এক সময় আমাদের ভাষার অধিকারটুকু কেড়ে নিতে চেয়েছিল। সেই অধিকার আমাদের আদায় করতে হয়েছিল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে। এটাও এক সময় মুছে ফেলতে চেয়েছিল। সে ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে চাই না। এরপর আবার ২১ ফেব্রুয়ারির বক্তব্য দেব, তখন বলতে পারব। শুধু এতটুকু বলব, বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ’৪৮ সালের ২ মার্চ, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে বসে বৈঠক। ১১ মার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তার কারণ ছিল পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের ওপর উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। এর জন্য প্রতিবাদ করা হলো। বাংলা ভাষাকে আরবি হরফে অথবা উর্দু হরফে লিখতে হবে সেই স্পর্ধাও আমাদের দেখতে হয়েছে। পরবর্তীতে বলা হলো ল্যাটিন হরফে বাংলা লিখতে হবে। বাঙালি কিন্তু কখনো পরাভব মানে না। পরাজয় মানেনি। আমাদের ভাষা বাংলা, সেটা নিয়েই আমরা এগিয়ে গেছি। আমরা এগিয়ে যাব।

ষাটের দশকে রবীন্দ্রবিরোধিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশে রবীন্দ্রবিরোধিতা হয়েছে। ভাবুন তো রবীন্দ্র-সাহিত্য ছাড়া বাংলা সাহিত্য ভাবা যায়? আমাদের এর বিরুদ্ধেও সংগ্রাম করতে হয়েছে। নজরুলের লেখায় মুসলমানিত্ব করা হয়েছে। শ্মশানের জায়গায় গোরস্থান দেওয়া হয়েছে। আমাদের পদে পদে আন্দোলন করে আজকের এই অবস্থানে আসতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সাহিত্যের আলাদা একটা মাধুর্য আছে। আমাদের দেশের নদী-নালা, খাল-বিল, বন, পাখির ডাক সবকিছুর মধ্যেই আলাদা একটা সুর আছে, ছন্দ আছে। বিদেশিরা আমাদের ভাষা সম্পর্কে আরও জানতে পারুক সেটাই আমরা চাই। জাতির পিতা একবার আন্তর্জাতিক সাহিত্য মেলার আয়োজন করেছিলেন। আমি মনে করি, এ রকম বিশেষ সাহিত্য মেলার আয়োজনের উদ্যোগ নেবে বাংলা একাডেমি।’ তিনি বলেন, কভিডের কারণে দুই বছর সরাসরি মেলায় আসতে পারিনি। আজকে আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। এই প্রাঙ্গণে আমার সবসময় পদচারণ ছিল। ছাত্রজীবন থেকেই বইমেলায় আসতাম। সকাল থেকে শুরু করে সারা দিন এখানে ঘুর ঘুর করতাম। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তো বলতে গেলে পায়ে শিকল পড়ে যায় ...নিয়মের মধ্যে। তো সেই স্বাধীনতা পাচ্ছি না। এই প্রাঙ্গণে আমাদের সব সময় পদচারণ ছিল। আমি সব সময় বাংলা একাডেমির লাইব্রেরিটাই ব্যবহার করতাম। আমি আর আমার বন্ধু বেবী মওদুদ আমরা ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে আসতাম। এখানে আমাদের একটা আলাদা আকর্ষণ ছিল।

অনুবাদ ও শিশু সাহিত্যের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে যেসব বাংলা বই প্রকাশ হয় তার সবই ইংরেজিতে অনুবাদ হওয়া দরকার। কারণ এর মধ্য দিয়ে আমাদের লেখকদের লেখায় যে এ দেশের ফুল, ফল, রূপ, রস ও সংস্কৃতি নান্দনিকতা রয়েছে তা সম্পর্কে জানতে পারবে। একই সঙ্গে শিশু সাহিত্যবিষয়ক বই আরও বেশি প্রকাশ হওয়ার দরকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন করার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বাংলা একাডেমির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করে বইমেলা উদ্বোধনের পর আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান (সিআরআই), বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, ছাত্রলীগের পত্রিকা মাতৃভূমির স্টল ঘুরে দেখেন। এ ছাড়া যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। এর আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ শেষে এবং অমর একুশের সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর অমর একুশের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান : বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রাপ্ত ১৫ জন কবি, লেখক ও গবেষকের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত (যৌথভাবে কবিতায়), তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), মাসুদুজ্জামান (প্রবন্ধ/গবেষণায়), আলম খোরশেদ (অনুবাদ), মিলন কান্তি দে এবং ফরিদ আহমদ দুলাল (যৌথভাবে নাটকে), ধ্রুব এষ (কিশোর সাহিত্য), মুহাম্মদ শামসুল হক (মুক্তিযুদ্ধের ওপর গবেষণা), সুভাষ সিংহ রায় (বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা), মোকারম হোসেন (বিজ্ঞান/বিজ্ঞান কথাসাহিত্য/পরিবেশ বিজ্ঞান), ইকতিয়ার চৌধুরী (জীবনী/স্মৃতিকার/ভ্রমণকাহিনি) এবং আবদুল খালেক ও মুহাম্মদ আবদুল জলিল (যৌথভাবে লোককাহিনিতে)।

৭ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এর মধ্যে শেখ হাসিনা সম্পাদিত বঙ্গবন্ধুর রচনাবলি, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি, বাংলা একাডেমি পত্রিকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী সংখ্যা, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী : পাঠ বিশ্লেষণ, কারাগারের রোজনামচার : পাঠ বিশ্লেষণ, আমার দেখা নয়াচীন : পাঠ বিশ্লেষণ ও হাসান আজিজুল হকের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে, বইমেলা ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে দর্শক ক্রেতা ও পাঠকরা রাত সাড়ে ৮টার পর মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবেন না। সরকারি ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং দুপুরে খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে। এবারের মেলায় ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি মাঠে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া এ বছর মোট ৩৮টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৫৩টি স্টল থাকবে, যা ২০২২ সালে ছিল ১২৭টি, ২০২১ সালে ১৪০টি এবং ২০২০ সালে ১৫৫টি। অন্যদিকে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বইমেলা ভেন্যু ও এর আশপাশে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে এবং মেলার ১১ লাখ বর্গফুট জায়গার প্রতিটি স্থান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।

সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের আলোচনা চলছে : সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতীয় সংসদে টেবিলে উপস্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেছেন, সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদন নতুন ধারণা। সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে যেসব কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যদি সম্ভব হয় তাহলে মাতারবাড়ী, মহেষখালী বা বাঁশখালীতে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবতা যাচাই করা হবে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে গতকালের বৈঠকে সরকারদলীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। প্রশ্নকর্তা কক্সবাজার সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সুবিধাজনক স্থানে সাগরের পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সরকারের পরিকল্পনা আছে কি না তা জানতে চান।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিশ্বের কোনো কোনো দেশে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা ব্যয়সাপেক্ষ এবং তা বাণিজ্যিকভাবে ফলপ্রসূ হয়নি। ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা এ মুহূর্তে নেই। এ ছাড়া সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারণা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের খরচ কমে এলে বঙ্গোপসাগরের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।

সরকার মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক শ্রমবাজারনির্ভরতা কমাতে চায় : সরকারদলীয় সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে জানিয়েছেন, বর্তমানে ১৬৮টি দেশে শ্রমশক্তি রপ্তানি করা হচ্ছে। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের ফলে ২০২২ সালে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। এ ছাড়া সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বোয়েসেল-এর মাধ্যমে আরও ১৮ হাজার ৫৯৩ জন কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থান লাভ করেছে। কিন্তু সরকার মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক শ্রমবাজারনির্ভরতা কমাতে চায়। সে জন্য পূর্ব ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার নতুন কিছু দেশে শ্রমিক রপ্তানি চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লি. (বোয়েসেল)-এর মাধ্যমে ২০২২ সালে ৬১৫ জন পেশাজীবী এবং ১৭ হাজার ৯৭৮ জন দক্ষ কর্মীসহ আরও ১৮ হাজার ৫৯৩ জন কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থান লাভ করেছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতি উপজেলা থেকে গড়ে বছরে ১ হাজার কর্মী পাঠানোর জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়েছি : আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপন্ন হতো ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে, সবজি ও পিঁয়াজে তৃতীয় স্থান। পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ৭০টির বেশি দেশে সবজি ও ফল রপ্তানি হচ্ছে এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আমরা ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছি।

ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে : জাতীয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি উচ্চ রেমিট্যান্স প্রাপ্ত দেশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ মহামারির পরও ২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৭৭ এবং ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি আরও বলেন, বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে সরকার ১ জুলাই ২০১৯ সাল থেকে শতকরা ২ ভাগ প্রণোদনা প্রদান করে আসছে। সরকার ইতোমধ্যে প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টি ২ ভাগ থেকে ২ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করেছে। সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবাসী কর্মীদের অর্জিত অর্থ বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে প্রেরণের জন্য দূতাবাসসমূহ অব্যাহত প্রচারণা চালিয়ে আসছে। প্রতি বছর ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’সহ দূতাবাসের সব অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে রেমিট্যান্সের কোনো বিকল্প নেই এবং তা আনতে হবে বৈধ পথে।

সর্বশেষ খবর