মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

লোকাল বাস ঢাকা নগর পরিবহন

♦ যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করছে ♦ কমেছে টিকিট কাউন্টার ♦ অবৈধ বাসের দখলে রুট

হাসান ইমন

লোকাল বাস ঢাকা নগর পরিবহন

রাজধানীর পরিবহনব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর চালু হয় ‘ঢাকা নগর পরিবহন’-এর ২১ নম্বর রুট। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২ ও ২৬ নম্বর রুট চালু করে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। নিয়ম অনুযায়ী এসব রুটে নগর পরিবহন ছাড়া অন্য পরিবহন চলবে না। নির্দিষ্ট থাকবে বাস স্টপেজ ও টিকিট কাউন্টার। এসবের কোনো নিয়মই মানছে না ঢাকা নগর পরিবহন। অন্য পরিবহনের মতো যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করছে, নির্দিষ্ট স্টপেজে থামছে না। অধিকাংশ কাউন্টার সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এসব কারণে লোকাল বাসে পরিণত হয়েছে ঢাকা নগর পরিবহন।

জানা যায়, ঢাকা নগর পরিবহনের ২১ নম্বর রুটে ৫০টি বাস দিয়ে যাত্রা হয়েছিল। এর মধ্যে বিআরটিসির ৩০ ও ট্রান্সসিলভা পরিবহনের ২০টি। ওই সময় বলা হয়েছিল, এ রুটে ক্রমান্বয়ে ১০০ বাস নামবে। কিন্তু বাস না বেড়ে উল্টো কমেছে। এখন বিআরটিসির ৩০টি বাস চললেও ট্রান্সসিলভার চলছে আটটি। এসব পরিবহনেও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করছে। নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস থামছে না। তবে বিআরটিসি বাসে সহকারী না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। ২২ নম্বর রুটের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এ রুটের বাস চালাচ্ছে হানিফ পরিবহন। ৫০টি বাস দিয়ে যাত্রা হওয়ার কথা থাকলেও ৩০টি দিয়ে যাত্রা হয়। শুরুতে টিকিট কাউন্টার থাকলেও পরে তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যত্রতত্র বাস থামছে ও যাত্রী ওঠানামা করছে। বাসের সহকারীদের ডেকে ডেকে যাত্রী তুলতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে এ পরিবহনের বাস নির্দিষ্ট স্থানের আগে যাত্রী নামিয়ে বাস ঘুরে অন্য রুট দিয়ে চলে যায়। গতকাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে নগর পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব ১৩-২৫৫৫ নম্বরের বাসটি শাহবাগের যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। ওই সময় যাত্রীদের সঙ্গে বাসের চালক ও সহকারীদের বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হতে দেখা গেছে। ওই গাড়ির যাত্রী মো. ইকবাল বলেন, ‘আমি স্টাফ কোয়ার্টার থেকে উঠেছি, যাব শাহবাগ। কিন্তু বাসের চালক ও সহকারী আমাকে এখানে নামিয়ে দেয়। কারণ হিসেবে চালক বলেছে, সামনের রাস্তায় যানজট, গাড়ি ঘুরিয়ে বিআইপি রুট দিয়ে চলে যাবে। তাহলে আমাকে ওইটুকু পথের ভাড়া ফিরিয়ে দিক। না দিয়ে উল্টো আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছে।’ শুধু তিনি নন, আরও চারজন যাত্রী চালকের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। সার্বিক বিষয়ে অভি মোটরসের মালিক প্রতিনিধি মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ রুটে বাস চলাচলের আগে কমিটি বলেছিল- এ রুটে থাকা অবৈধ বাসগুলো অভিযানের মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ রুটে অন্য পরিবহন চলছেই। এর কারণে আমরা পরিমাণমতো যাত্রী পাই না। প্রতিদিনই আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর যে স্থানে কাউন্টার, তার বেশির ভাগ জায়গায় যাত্রী থাকে না। দিনের বেশির ভাগ যাত্রী কম নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ কারণে আমরা পজ মেশিন দিয়ে গাড়ির ভেতরে টিকিট দিচ্ছি। যদি কথা অনুযায়ী অন্য পরিবহন সরিয়ে দেয় তাহলে আমরাও নিয়মের মধ্যে পরিবহন পরিচালনা করব।’

২৬ নম্বর রুটে বিআরটিসির ৫০টি ডবল ডেকার বাস দেওয়ার কথা ছিল এ রুটে। এখন পর্যন্ত বাস চলছে ২৫টি। তবে বাণিজ্য মেলা শুরুর পর বিআরটিসির কয়েকটি বাস ওই রুটে চলেছে। এখন বাণিজ্য মেলা শেষ হওয়ায় আবার ফিরে এসেছে। কিন্তু টিকিট ছাড়া যাত্রী তোলার অভিযোগ রয়েছে চালকদের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে ডিটিসিএ’র ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম বলেন, ‘চালু হওয়া তিন রুটে নগর পরিবহন ছাড়া রুট পারমিটবিহীন অন্য বাসের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আর কাউন্টার ছাড়া যত্রতত্র যাত্রী নামার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। নিয়ম অনুযায়ী নগর পরিবহন চলবে।’

সর্বশেষ খবর