শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

নদ আছে পানি নেই বড়ালে ধান চাষ

পাবনা প্রতিনিধি

নদ আছে পানি নেই বড়ালে ধান চাষ

চাটমোহর জাবরখোল গ্রামে বড়াল নদে বোরো ধান রোপণ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা বড়াল নদের বুকে চাষাবাদ হচ্ছে ফসল। শুষ্ক মৌসুমে উৎসমুখ রাজশাহী জেলার চারঘাটে পদ্মা নদী থেকে বড়ালে পানি প্রবাহিত হয় না। উৎসমুখে স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে। বালুর চর পড়েছে। এ ছাড়া নদের অনেকাংশ অবৈধ দখলে। যেসব অংশে যৎসামান্য পানি আছে, সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলা হয়। এতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। নদ পাড়ের মালিকরা জমিসংলগ্ন অংশে আবাদ করেন বোরো ধান, গম, খেসারি, আখ, মসুর, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসল। অনেক জায়গা দেখে বোঝার উপায় নেই এককালে সেখানে খরস্রোতা নদী ছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বড়াল নদ রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ নদ পাবনার বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জে যমুনায় মিলিত হয়েছে। তবে উৎসমুখে স্লুইসগেট নির্মাণ করায় বড়াল নদ এখন মৃতপ্রায়। ফলে চলনবিল এলাকায় কমেছে মাছ, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। এতে এ অঞ্চলের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও কৃষি অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের বোথর গ্রামের বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, বড়াল নদে পানি না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা সেখানে এখন বোরো ধান চাষ করছেন। নদের মাটি উর্বর ও নরম। সেখানে চাষ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ফলনও বেশ ভালো হয়। মূলত নদীসংলগ্ন জমি আছে যে কৃষকের তারা নদের বুকে চাষাবাদ করে থাকেন। দোলং গ্রামের আছির উদ্দিন (৬৫) বলেন, বড়াল এখন এটি খালে পরিণত হয়েছে। আগে নদী পথে অনেক জায়গায় যেতে পারতাম। ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক ভালো ছিল। এখন সেটা স্বপ্নমাত্র। রামনগর গ্রামের রইচ উদ্দিন বলেন, নদের দুই পাড়ে দখল হচ্ছে, মাটি কেটে নিচ্ছে দখলদাররা। চাটমোহর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহিম বলেন, এখনই পুনর্খনন শুরু না করলে বড়াল তার ঐতিহ্য হারাবে। বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, নদ পুনরুদ্ধারে পাড়ের বাসিন্দারা এর আগে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন করেছেন। ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে ১ হাজারের বেশি সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, মিছিল, পথসভা, মতবিনিময়, সেমিনার, সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছে। বেশকিছু অর্জন থাকলেও এখন পর্যন্ত নদটি স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি। আমরা চাই নদের সীমানা চিহ্নিত করে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হোক। চাটমোহর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানজিনা খাতুন বলেন, যেসব অসাধু ব্যক্তি নদের জায়গা দখল করেছে কিংবা দখলের পাঁয়তারা করছে তাদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন বলেন, আমরা অধিক গুরুত্বের সঙ্গে পাবনার ইছামতি এবং বড়াল নদ নিয়ে কাজ করছি। নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ড বড়াল জিপিপি পানি উন্নয়ন বোর্ডে দিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর