মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ

পাঁচ বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেড প্লান্টটিতে যথাযথ নিরাপত্তা নির্দেশনা অনুসরণ না করেই অক্সিজেন উৎপাদন করা হচ্ছিল। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রাংশ সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা, গ্যাস নিয়ন্ত্রণ ভাল্ব ত্রুটিসহ ৯ কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি পাঁচটি ইস্যুর তথ্য বের করার জন্য কাজ শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায় বলেন, ‘রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ রক্ষণাবেক্ষণে কিছু নিরাপত্তা গাইডলাইন অনুসরণ করতে হয়। যথাযথভাবে তা রক্ষণাবেক্ষণ না করা হলে ভয়ংকর হয়ে ধ্বংসাত্মক রূপ নিতে পারে। অক্সিজেন প্লান্ট বিস্ফোরণের এটিই অন্যতম কারণ হতে পারে- যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা এবং নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুসরণ না করা।’ একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুমন গাঙ্গুলী বলেন, ‘প্রত্যেকটা রাসায়নিক কারখানার যন্ত্রপাতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হয়। অক্সিজেন প্লান্ট বিস্ফোরণের প্রাথমিক কারণ মনে হচ্ছে- সঠিন রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়নি। ধারণা করছি অক্সিজেন প্লান্টের অনেক আগে থেকে লিকেজ ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সেদিকে নজর ছিল না। ফলে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে।’ জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে- বাতাস পৃথকীকরণ প্লান্ট থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়েছে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন সিলিন্ডার পাওয়া গেছে, যেগুলো রাখার অনুমোদন ছিল না।’ চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, অক্সিজেন প্লান্টে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল কি না তাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

পাঁচ ইস্যুতে তদন্ত : সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি পাঁচটি ইস্যুর তথ্য বের করার কাজ করছে। এর মধ্যে আছে কারখানা পরিচালনায় প্রতিষ্ঠানটির মালিকের কোনো ত্রুটি আছে কি না, অক্সিজেন প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে কোনো কারিগরি ত্রুটি ছিল কি না, পুরো কারখানার অবকাঠামোগত কোনো ত্রুটি আছে কি না, কারখানায় প্রয়োজনীয় জনবল ছিল কি না এবং নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা বা ঘাটতি আছে কি না। কার্যত এ চারটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আগামী বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা। তদন্ত কমিটির প্রধান ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, বিশেষ কিছু কারণ নিয়ে আমরা তদন্ত কাজ করছি। এর মধ্যে কারখানা পরিচালনায় মালিকের ত্রুটি, কারিগরি ত্রুটি, কারখানার অবকাঠামোগত সমস্যা এবং নিরাপত্তাজনিত ত্রুটি আছে কি না তা আমরা তদন্ত করে বের করব। আমরা চাই, দুর্ঘটনা নিয়ে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা, পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ এবং পর্যবেক্ষণ করে কমপ্লিট একটা প্রতিবেদন তৈরি করতে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কিছু কার্যকর সুপারিশও প্রণয়ন করব। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দফতর-সংস্থাগুলোকে অনুরোধ করা হবে।

আরও একজনের মৃত্যু : সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও একজন মারা গেছেন। গত রবিবার রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও ছয়জন মারা যান। তাছাড়া, এ ঘটনায় আহত ১৮ জনের অবস্থা এখন শঙ্কামুক্ত হলেও তাদের দীর্ঘ সময় নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। তারা চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি, অর্থোপেডিক্স ও ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত প্রভাষলাল শর্মা (৫৫) মারা যান। তিনি প্রতিষ্ঠানটির অপারেটর পদে চাকরি করতেন। প্রভাষলাল সীতাকুণ্ড থানার ভাটিয়ারি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মতিলাল শর্মার ছেলে। প্রভাষের দুই সন্তান ও স্ত্রী আছে। প্রভাষলাল শর্মার ছোট ভাই নয়ন বলেন, ওই ঘটনায় আমার ভাই মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাত পান। পরে তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসক তাকে দ্রুত আইসিইউতে ভর্তি করান। রবিবার রাতে তিনি মারা যান।

 

সর্বশেষ খবর