সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনে মিটবে জ্বালানি তেলের চাহিদা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে মিটবে জ্বালানি তেলের চাহিদা। পড়তে হবে না ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে। কৃষিতে আসবে আমূল পরিবর্তন। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালুর মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল ডিজেল এলে এসব সংকট থাকবে না। এমনটাই আশা করছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়ালি যৌথভাবে ১৮ মার্চ ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে স্থাপিত ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের রিসিভ টার্মিনালের জ্বালানি তেল পাঠানোর এ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলে এ অঞ্চলের কৃষি ও শিল্পে সহজলভ্য হবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেল।

জানা গেছে, বৃষ্টির অভাবে এ অঞ্চলের কৃষি এখন সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে।  সেচের অন্যতম উপাদান হচ্ছে ডিজেল। মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের তেলের ডিপোতে সরাসরি তেল আসবে। এ তেল এ অঞ্চলের মানুষ সেচে ব্যবহার করবে। দেশের অন্যান্য স্থান থেকে তেল আনতে পাম্প মালিকদের যে খরচ পড়বে তার অনেক কম খরচ পড়বে পার্বতীপুর থেকে তেল আনতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া  হয়েছে। নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল এলে। এ প্রকল্প চালু হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজার দরের চেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল কেনার সুযোগ পাবে। প্রকল্পের সব কার্যক্রম মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই সর্বাধুনিক অটোমেশন পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু  উদ্বোধনের অপেক্ষা। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের আওতায় পার্বতীপুরে ৬ দশমিক ৮০ একর জমিতে রিসিপ্ট টার্মিনাল (আরটি) নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের  ৫ হাজার ৬৯০ টন ধারণক্ষমতার ছয়টি ফুয়েল ট্যাংক, অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য ৩ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার দুটি ওয়াটার ট্যাংক ও অগ্নিনির্বাপক ফোম রাখার জন্য ২ হাজার ৫০০ লিটার ধারণক্ষমতার দুটি ব্লাডার ট্যাংকসহ আটটি ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পে অটোমেশন সিস্টেম স্থাপন, পাম্প হাউস, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন ও ২৪টি ট্র্যান্সফর্মার স্থাপন, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউস, সিকিউরিটি পোস্ট, সিকিউরিটি গেট, ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম স্থাপন ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পাইপলাইন নির্মাণের জন্য পঞ্চগড়, নীলফামারী ও দিনাজপুরে ১৯৯ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ, ১৩৪ দশমিক ১২ একর হুকুম দখল করা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ অংশে মোট ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। পাঁচটি এসভি স্টেশন (সেকশনলাইজিং ভালভ স্টেশন) রয়েছে। ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে। এখন শিলিগুড়ি টার্মিনাল থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারত অংশে ৫ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ অংশে ১২৫ কিলোমিটার।

এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত সরকার দেবে ৩০৩ কোটি রুপি ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন দেবে ২১৭ কোটি টাকা। ১০ ইঞ্চি ব্যাসের এ পাইপ দিয়ে বছরে ১০ লাখ টন ডিজেল পরিবহন করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, এ প্রকল্প চালু হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জ্বালানি তেলের সংকট কখনো হবে না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে এ অঞ্চলের মানুষ। এ ছাড়া কৃষিক্ষেত্রে মানুষ সুবিধা পাবে।

সর্বশেষ খবর