শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
সড়ক দুর্ঘটনা

চার বছরেও চালু হয়নি চালকদের বিশ্রামাগার

প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বেড়েছে চার দফায়

হাসান ইমন

দেশের মহাসড়কগুলোতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এর অন্যতম কারণ চালকরা বিশ্রামহীন অবস্থায় গাড়ি চালান। এ কারণে ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মহাসড়কের পাশে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। তারা কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ, মাগুরা ও হবিগঞ্জে মোট চারটি বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও মাত্র দুটির কাজ শেষ করতে পেরেছে। তবে এর ব্যবহারিক কার্যক্রম এখন পর্যন্ত শুরু করা হয়নি। আর বাকি দুটির কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ চারবার বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার নিমসারে, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়ায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মাগুরার লক্ষ্মীকান্দরে এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হবিগঞ্জের জগদীশপুরে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে কুমিল্লার নিমসার ও সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়ার বিশ্রামাগারের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। অপারেটর নিয়োগ দিয়ে চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছে এ দুটি। তবে মাগুরার লক্ষ্মীকান্দর এবং হবিগঞ্জের জগদীশপুরের বিশ্রামাগারের কাজ খুব একটা এগোয়নি। এই দুটি বিশ্রামাগার নির্মাণে প্রায় সাড়ে ১৩ একর জমি প্রয়োজন। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এই জমি বুঝে পেয়েছে ২০২২ সালে। ফলে সময় মতো কাজ শুরু করা যায়নি। এখন মাগুরার বিশ্রামাগারের একতলার কাজ প্রায় শেষ। হবিগঞ্জে পাইলিং শুরু হয়েছে মাত্র। সব মিলিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। তবে আগের নকশা অনুযায়ী বিশ্রামাগারগুলো দোতলা করার কথা। সিরাজগঞ্জ ও কুমিল্লার বিশ্রামাগার আগের নকশায়ই শেষ হয়েছে। তবে ট্রাকমালিক ও চালকসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মিটিংয়ের পর এটি আরও দুইতলা বাড়িয়ে চারতলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুনে শুরু হয়ে ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এই সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও এক বছর ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে আরও দুইতলা করতে হবে বলে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ করতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হবে। ইতোমধ্যে মেয়াদ বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২৬ কোটি টাকা। তবে নতুন করে আরও দুইতলা বৃদ্ধির কারণে ৩৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৫৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়াও পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য পার্কিং সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি নির্দেশনা প্রকাশ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। বিশ্রামাগার ইজারা বা অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ওঅ্যান্ডএম) ব্যবস্থায় পরিচালিত হবে। এ বিষয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা তানভীর সিদ্দিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চারটি বিশ্রামাগারের মধ্যে দুটির নির্মাণকাজ শেষ, আরও দুটির কাজ চলছে। আমাদের টার্গেট এ বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা। মাগুরা ও হবিগঞ্জের বিশ্রামাগার নির্মাণের জমি অধিগ্রহণ হতে সময় লেগেছে। ফলে সময় মতো কাজ হয়নি। তবে প্রকল্পের মূল কাজ জুনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এর বাইরে আরও কিছু কাজ আছে সেগুলো শেষ হতে সময় লাগবে। তিনি বলেন, কাজ শেষ হওয়া দুটি বিশ্রামাগারের দরপত্র আহ্বানের কাজ চলছে। এগুলো অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ওঅ্যান্ডএম) মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষকে দেওয়া হবে। তারা লভ্যাংশের একটা পারসেনটেজ আমাদেরকে দেবে। আরও জানা গেছে, এসব বিশ্রামাগারে দূরপাল্লার ট্রাকচালকরা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য দ্বিতল শয়নকক্ষে রাতযাপন করতে পারবেন, গাড়ি পার্কিং, বিনোদন পয়েন্ট, ক্যান্টিন, গোসলখানা, নামাজের জায়গা, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা কক্ষ, গাড়ি মেরামতের ওয়ার্কশপ, ওয়াশজোন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা, সবুজায়ন ও নিরাপত্তা প্রাচীরের মধ্যে সীমিত আকারে খেলার ব্যবস্থাও রাখা হবে। সব ধরনের পণ্যবাহী যানবাহনের চালক ও সহকারীরা নির্ধারিত সেবামূল্য পরিশোধ করে বিশ্রামাগারের সেবা নিতে পারবেন। এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্রামাগারে যানবাহন পার্কিং, বিশ্রাম কক্ষ ও ওয়াশরুম ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী অতিভারী (এক্সট্রা হেভি) পণ্যবাহী মোটরযান পার্কিংয়ে প্রথম ৫ ঘণ্টার জন্য ১৫০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ৩০ টাকা দিতে হবে। ভারী পণ্যবাহী মোটরযানের জন্য প্রথম ৫ ঘণ্টায় ১০০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ২০ টাকা, মাঝারি ভারী পণ্যবাহী যানবাহন পার্কিংয়ে প্রথম ৫ ঘণ্টায় ৭৫ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ১৫ টাকা এবং হালকা পণ্যবাহী মোটরযানের প্রথম ৫ ঘণ্টায় ৫০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ১০ টাকা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্রাম কক্ষের জন্য প্রথম ৫ ঘণ্টায় ১৫০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ২৫ টাকা ভাড়া দিতে হবে। টয়লেট ও গোসলখানার জন্য ৩০ টাকা করে ফি নির্ধারণ করেছে সরকার।

সর্বশেষ খবর