মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বৈসাবির রঙে পাহাড়

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

বৈসাবির রঙে পাহাড়

বৈসাবির রং লেগেছে পাহাড়ে। এবার বৈসাবিকে ভিন্ন রূপে সাজিয়েছেন পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাষী ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ। নাচ, গান, মেলার মধ্য দিয়ে পালিত হবে বৈসাবি। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট চত্বরে বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু-বিহু অর্থাৎ বৈসাবি মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলা উপলক্ষে রাঙামাটি সরকারি কলেজের চত্বর থেকে বের করা হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী আনন্দ র‌্যালি। র‌্যালিটি শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচ দিনব্যাপী বৈসাবি মেলা উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। এ সময় রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইমতাজ উদ্দীন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অং সুই প্রু চৌধুরী, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ উপস্থিত ছিলেন। বৈসাবি ঘিরে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে বসেছে হরেক রকম বাহারি পণ্যের স্টল। সবগুলো স্টল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাচাঙ ঘরের আদলে তৈরি। বাঁশ আর কাঠ দিয়ে। আর এসব স্টলে স্থান পেয়েছে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, বম, চাক, পাংখোয়া, লুসাই, খুমী ও খিয়াং নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি, সংস্কৃতি, খাবার, নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদিসহ নানা পণ্যসমগ্রী। মেলাকে আরও আকর্ষণীয় করতে যোগ দিয়েছেন অপর দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের শিল্পীরা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এ বৈসাবিকে ভিন্ন নামে পালন করে থাকেন।

চাকমা, বিজু, মারমা, সাংগ্রাইং, ত্রিপুরা, বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যা, বিষু আর আহমিয়ারা বিহু বলে পালন করে এ বৈসাবি। পাহাড়ের আনাচে-কানাচে সর্বত্র এখন বৈসাবির সাজ সাজ রব। অন্যদিকে মেলা উৎসব মাতিয়ে তুলেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রাদয়ের তরুণ-তরুণীরা। তাদের পায়ের নুপুরের ছন্দ আর বাঁশির সুরে মেলা চত্বরে ছুটে এসেছে হাজারো দর্শক। মানুষের পদভারে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মেলা প্রাঙ্গণ। মেলা ঘিরে পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলন ক্ষেত্র পরিণত হয়েছে। মেলা ঘিরে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করতে মূলত এ বৈসাবি উৎসবটিকে সামনে রেখে রাঙামাটিতে পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু মেলা। এ মেলায় রাঙামাটি, বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দল নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করছে। বসেছে পিঠা পুলির আসর। শিশু-কিশোরদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগিতা, চাকমা নাটক, পাচন রান্না প্রতিযোগিতাসহ ম্যাহাজিন অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ, পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর জীবনধারার ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে মেলা প্রাঙ্গণ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর