বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বৈশ্বিক সংকটে পেছাল নতুন পে-স্কেল

সরকারি চাকুরেদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘভাতার ঘোষণা আসতে পারে

মানিক মুনতাসির

বৈশ্বিক সংকটে পেছাল নতুন পে-স্কেল

চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে। জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু ডলারের বিপরীতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।   এ ছাড়া পরিকল্পনামতো সরকারের রাজস্ব আদায়ও হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি চাকুরেদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো দিতে চায় না সরকার। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ বিবেচনায় নিয়ে নতুন পে-স্কেলের পরিবর্তে ১০ থেকে ২০ শতাংশ মহার্ঘভাতার ঘোষণা দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সাধারণত সরকার প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটি নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করে। ২০০৯ সালে সপ্তম বেতন স্কেল বাস্তবায়নের পর সরকার ২০১৫ সালের জুলাইয়ে একটি নতুন বেতন স্কেল প্রয়োগ করে, বেতন প্রায় ১০০% বৃদ্ধি করে। এর পর থেকে প্রতি বছর জুলাইয়ে কর্মচারীরা ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বেতন কাঠামো ঘোষণা করেছিল সরকার। এরপর প্রতি বছর মূল্যস্ফীতির চাপ বিবেচনায় নিয়ে বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ছিল। এজন্য অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও করা হয়েছিল।

 কিন্তু তা খুব একটা কার্যকর হয়নি। এদিকে করোনা মহামারির পর বৈশ্বিক সংকট শুরু হওয়ায় সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। যার ফলে মানুষের জীবন ধারণের ব্যয় বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির চাপ প্রায় ২ অঙ্কের ঘর ছুঁয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারি চাকুরেদের প্রত্যাশা ছিল হয়তো এবার একটি নতুন বেতন কাঠামো পাওয়া যাবে। এ নিয়ে সরকারের ভেতরে ও বাইরে আলোচনা হয়েছে একাধিকবার। কিন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক পরিস্থিতি আরও অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় সে অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসেছে সরকার।

এজন্য আগামী বছর নতুন বেতন কাঠামোর পরিবর্তে আপাতত মহার্ঘভাতা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। সম্প্রতি সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ বিষয়টি তোলা হলেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এজন্য প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মহার্ঘভাতা ঘোষণা করা হবে। যদিও সরকারি চাকুরেদের অনেকেই এতে অসন্তোষ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমরা এখন যে বেতন কাঠামোয় বেতন পাই সেটা তো অন্তত আট-নয় বছরের পুরনো। এ সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কতটা বেড়েছে আর মানুষের জীবনযাত্রায় কতটা প্রভাব পড়েছে তা নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। ফলে এখন একটি নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা সময়ের দাবি। তবে এও ঠিক যে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না। ফলে আমরাও কিছুটা সংকটের মধ্যেই আছি। এদিকে করোনা-পরবর্তী সংকট মোকাবিলায় কৃচ্ছ্রসাধনের পথ বেছে নেয় সরকার, যা এখনো চলছে। এতে চলতি অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় সাশ্রয় করেছে সরকার। আগামী বাজেটেও এ নীতি বহাল রাখতে মত দিয়েছে অর্থ বিভাগ। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৯.৩৩ শতাংশ এবং বছরের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮.৩৯ শতাংশ। এ মূল্যস্ফীতির চাপ আমলে নিয়ে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ মহার্ঘভাতা ঘোষণা করা হতে পারে আসছে বাজেটে। অবশ্য এ মহার্ঘভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করা হয় না। তাই তাদের বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য ভাতার কোনো পরিবর্তন হবে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারী রয়েছে। তবে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করলে এ সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ।

সর্বশেষ খবর