শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রকল্পে জটিলতা

চার সংস্থার ঠেলাঠেলিতে রিং রোড

দক্ষিণ ও উত্তরের অংশ নিজেরাই করবে বাস্তবায়নে আগে সমীক্ষা করেছে সওজ ও পাউবো

হাসান ইমন

রাজধানীর চারপাশে বৃত্তাকার ইনার রিং রোড করতে চায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির অংশে দক্ষিণ আর ঢাকা উত্তরের অংশে উত্তর সিটি নিজেরাই বাস্তবায়ন করতে চায়। পুরো বৃত্তাকার সড়কটি পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করতে সড়কের সঙ্গে উড়ালপথের সমন্বয় করা হবে। যেন বৃষ্টি ও বন্যার পানি সরতে কোনো বাধা না হয়। যদিও এই বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর আগে সংস্থা দুটি সমীক্ষা শেষ করেছে। এখন প্রকল্প বাস্তবায়নে চার সংস্থার তৎপরতা থাকায় দেখা দিয়েছে জটিলতা।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর চারপাশে ৮৫ কিলোমিটার বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এর মধ্যে ডেমরা থেকে বেরাইদ-পূর্বাচল হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি। বাকি ৬০ কিলোমিটার সড়ক ও জনপথ অধিদফতর নির্মাণ করতে সম্ভাব্যতা যাচাই ও চূড়ান্ত নকশা করেছে। কিন্তু এই সড়কটির বছিলা থেকে সোয়ারিঘাট বা সদরঘাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার জায়গা পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যে। যেখানে তারা নিজেরা আলাদা একটি সড়ক বানাতে চায়। এতে সময়ক্ষেপণের আরেক ধাপে পড়ে যায় প্রকল্পটি। কারণ অর্থায়ন জটিলতার কারণে এমনিতেই প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত কেবল কাগজে-কলমেই আটকে আছে। সূত্র মতে, ইনার সার্কুলার সড়কের গাবতলী-বাবুবাজার-কদমতলী অংশের ১২ কিলোমিটার নির্মাণ সবচেয়ে জরুরি। সেখানে সিটি করপোরেশন জমি ব্যবহারের অনুমতি না নেওয়ায় ইনার সার্কুলার সড়ক বাস্তবায়ন এখনো পরিকল্পনাতেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ইনার সার্কুলার সড়কের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। বিকল্প পথ না থাকায় ঢাকা থেকে পোস্তগোলা হয়ে চলে পদ্মা সেতুমুখী সব গাড়ি। এতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় যানজট বেড়েছে। পদ্মা সেতুতে যাওয়ার ফ্লাইওভার ও এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট কমাতে বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের তাগিদ আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকে। ইনার সার্কুলার সড়কের প্রথম অংশ অর্থাৎ পূর্ব অংশে ডেমরা থেকে বেরাইদ-পূর্বাচল-তেরমুখ হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক (ইস্টার্ন বাইপাস) নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ ও বাঁধ নির্মাণ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বাঁধ নির্মাণ শেষে তাতে সড়ক নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। কত বছর পর তা বাস্তবায়ন হবে, সেটি নিশ্চিত নয়। কিন্তু এই অংশে উড়ালসড়ক নির্মাণ করতে চায় সেতু কর্তৃপক্ষ। পাউবো এখন সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করেছে। কিন্তু একই অংশে সমীক্ষা করবে সেতু কর্তৃপক্ষও। গত ২১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) বোর্ড সভাসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে ২০২১ সালের ২২ জুন অনুষ্ঠিত সভায় সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, এলিভেটেড ইনার সার্কুলার সড়ক নির্মাণে পরামর্শকের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। এখন সমীক্ষা চলছে। তবে বৃত্তাকার ইনার সড়ক নির্মাণে দেরি হওয়া এবং সড়কটি সিটি করপোরেশন আওতাধীন হওয়ায় এটা বাস্তবায়ন করতে চায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ঢাকা মহানগরে চলমান সড়ক, রেল ও নৌপরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছে ডিটিসিএর পরিচালনা পর্ষদ। এ কমিটির সভাপতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। গত ৮ মে মন্ত্রীর সভাপতিত্বে সমন্বয় কমিটির প্রথম সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, রায়ের বাজার থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়ক ৮ লেনে প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যাচাই কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে। এ ছাড়া শিমরাইল থেকে ডেমরা হয়ে বালু নদ পর্যন্ত এই অংশ আমরাই করতে চাই। আরএসটিপি ফলো করে এই সড়ক নির্মাণ করা হবে। উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ইনার রিং রোডের ডিএনসিসি অংশ আমরা নির্মাণ করব। ঢাকা শহরকে বালতি বানাতে চাই না। বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ঢাকা শহরকে বালতি বানানো হয়েছে। একটু ভারী বৃৃষ্টি হলে সেচ দিয়ে পানি নিষ্কাশন করতে হয়। এই জন্য এই রিং রোডটি আমরাই বাস্তবায়ন করতে চাই। পুরো সড়কটি উড়ালপথ ও সড়কের মিশ্রণে করা হবে। যেখানে বৃষ্টি বা বন্যার পানি জমে থাকবে না।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিটি করপোরেশন ইনার রিং রোড বাস্তবায়ন করবে এমন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে প্রকল্পটির একটি অংশ সওজ বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি এখন অর্থায়নের জন্য জাপান সরকার যাচাই-বাছাই করছে।

সর্বশেষ খবর