মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
সরগরম সিটি নির্বাচনের মাঠ

সম্পদ বেশি খোকনের বার্ষিক আয়ে তাপস

বরিশাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

সম্পদ বেশি খোকনের বার্ষিক আয়ে তাপস

বরিশাল সিটি নির্বাচনে ছয় মেয়র প্রার্থীর মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত এগিয়ে। বার্ষিক আয় বেশি জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নগদ প্রায় আড়াই কোটি টাকা রয়েছে। তার বার্ষিক আয় সাড়ে ১০ লাখ টাকা। জাপা প্রার্থীর বার্ষিক আয় প্রায় ৮০ লাখ টাকা। নগদ প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা রয়েছে তার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থীর বার্ষিক আয় প্রায় ১৪ লাখ এবং জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চুর বার্ষিক আয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল      আহসান রূপনের বার্ষিক আয় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ এবং আলী হোসেন হাওলাদারের আয় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামায় এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। পেশায় ব্যবসায়ী খোকন সেরনিয়াবাত খুলনায় ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অংশীদার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যৌথ ব্যবসায় ১ হাজার ৬৭২ টাকা, ব্যাংক আমানত থেকে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭২ টাকা এবং এপার্র্টমেন্ট থেকে বছরে ৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৫০ টাকা আয় দেখিয়েছেন তিনি। নগদ ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭২ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭২ টাকা, কোম্পানির ২০ লাখ টাকার শেয়ার, ৩২ লাখ টাকা মূল্যের একটি মোটর গাড়ি, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকার আসবাবপত্র ও লাইসেন্স করা দুটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে খোকন সেরনিয়াবাতের। খুলনায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের চারতলা একটি ভবন, ঢাকার ধানমন্ডিতে ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি এপার্র্টমেন্ট এবং উত্তরায় ১৪ লাখ টাকা মূল্যের ছয়টি এপার্টমেন্টের কথা উল্লেখ রয়েছে হলফনামায়। তার স্ত্রী লুনা আবদুল্লাহর নগদ ১ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১২ হাজার ৩৯৭ টাকা, ৪৯ লাখ টাকা মূল্যের একটি মোটর গাড়ি, ২০ ভরি স্বর্ণালংকার, ৫০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং আড়াই লাখ টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। জাপা প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ঢাকায় ইওকোহামা লেবেলস অ্যান্ড প্রিন্টিং (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বরিশালের সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল লিমিটেড, সাউথ এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স এবং সাউথ অ্যাপোলো প্রোপার্টিজ লিমিটিডের পরিচালক। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, চাকরির বেতন-ভাতা বাবদ ৭৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯২৭ টাকা এবং সঞ্চয়ী আমানতের ১ হাজার ১৯৬ টাকা লভাংশসহ বছরে আয় ৮০ লাখ টাকার বেশি। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় দেখানো হয়েছে ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। তাপসের নগদ ২ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৬ লাখ ৫৩ হাজার ২২৩ টাকা রয়েছে। ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ডায়াগনস্টিক শেয়ার, ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকার মেডিকেল কলেজের শেয়ার এবং প্রোপার্টিজ ব্যবসায় ১৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ করেছেন তাপস। এ ছাড়া ৩৮ লাখ টাকা মূল্যের মোটর গাড়ি, ৬০ তোলা স্বর্ণালংকার, ইলেকট্রনিক ও আবসাবপত্র রয়েছে। ওয়ারিশসূত্রে জমি ও পাঁচতলা ভবনের অংশ এবং যৌথ মালিকানায় দুই একরের বেশি কৃষি জমি রয়েছে তার। একটি বেসরকারি ব্যাংকে ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫৫ টাকার গৃহসংস্কার ঋণ রয়েছে তার। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা এবং নির্ভরশীলদের নামে ৭২ হাজার টাকা উল্লেখ করেন তাপস।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের মাদরাসা শিক্ষকতা পেশায় বার্ষিক আয় ৭ লাখ ৬ হাজার টাকা। একটি বাড়ি, দুটি এপার্টমেন্ট এবং কৃষি ও অকৃষি জমি রয়েছে তার। এপার্টমেন্ট থেকে বছরে ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা এবং ব্যবসা ও কৃষি থেকে ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা আয়সহ বছরে তার মোট আয় ১৪ লাখ টাকার বেশি। নগদ ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫১৬ টাকা এবং ব্যাংকে ১ লাখ ২১ হাজার ৭৬৯ টাকা জমা রয়েছে তার। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক এবং আসবাবপত্রের তালিকা দিয়েছেন হলফনামায়। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ নেই তার।

কে কত খরচ করবেন : বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় ধরেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় ধরেছেন জাপা প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম ও জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু ৬ লাখ করে এবং দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন ও আলী হোসেন হাওলাদার ৫ লাখ টাকা করে নির্বাচনী খরচের সম্ভাব্য ব্যয় বিবরণী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন।

প্রতিশ্রুতি দিয়েই যাচ্ছেন প্রার্থীরা : প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রেখেছেন বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রধান তিন মেয়র প্রার্থী। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ আর গণসংযোগে অংশ নিয়ে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন নগরবাসীকে। এ ধারাবাহিকতায় গতকালও দিনভর নির্বাচনী ব্যস্ততায় কাটিয়েছেন তারা। গতকাল দিনের প্রথম ভাগে কালুশাহ সড়কে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। বিকালে নগরীর পোর্ট রোড পাইকারি মাছবাজারে মৎস্য শ্রমিক লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এদিকে গতকাল সকালে নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন জাপা প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। এ সময় তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা একজন প্রার্থীর বিশেষ আত্মীয়। তিনি একচোখা নীতি অবলম্বন করছেন। তিনি জাতীয় পার্টির অভিযোগ আমলে নেন না। গতকাল বিকালে নগরীর নূরিয়া স্কুল জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে এবং পরে আশপাশ এলাকায় গণসংযোগ করেন মুফতি ফয়জুল। জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু, স্বতন্ত্র কামরুল আহসান রূপন ও আলী হোসেন হাওলাদারের কোনো তৎপরতা গতকালও দেখা যায়নি।জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চুর পেশা ব্যবসা। আবাসিক হোটেল ব্যবসায় ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫০ টাকা, ঘর ভাড়া থেকে ৬ লাখ ৬ হাজার ৯৮০ টাকা এবং দোকান ভাড়া বাবদ ৬ লাখ ২৩ হাজার ৬৬০ টাকাসহ তার বার্ষিক আয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। নির্ভরশীলদের চাকরি থেকে বছরে আয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। একটি প্রাইভেটকার, একটি মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্রের হিসাব দিয়েছেন তিনি। তার ব্যবসায় মূলধন ৫১ লাখ ১৯ হাজার ৭০০ টাকা। স্ত্রীর নগদ ৩ লাখ টাকা, ছেলের নামে ব্যাংকে ছেলের জমা ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং উভয়ের ১৮ ভরি স্বর্ণালংকার হলফনামায় উল্লেখ করেন তিনি।

বিএনপির প্রয়াত সাবেক মেয়রের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন হলফনামায় নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করেছেন। নগদ ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৫ টাকা, ব্যাংকে জমা ১২ হাজার ১৬৫ টাকা এবং রিভার আইল্যান্ড ইন্টিগ্রেশন লিমিটেডে ১ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার রয়েছে তার। ২৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মাইক্রোবাস এবং ব্যবসায় ৭ লাখ ৮ হাজার ৫৪৫ টাকা বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করেন রূপন। ব্যবসায় বছরে ৪ লাখ ৩২ হাজার ২২১ টাকা আয় দেখিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া কৃষি ও অকৃষি জমি দেখিয়েছেন তিনি। স্ত্রী কিংবা নির্ভরশীলদের নামে কোনো সম্পদ রূপনের হলফনামায় উল্লেখ নেই।

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী পেশায় ব্যবসায়ী আলী হোসেন হাওলাদারের বাড়ি ও দোকান ভাড়া বাবদ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং ব্যবসায় ৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৩ টাকাসহ বার্ষিক আয় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ১৮ লাখ টাকা, দুটি ট্রাক, একটি মোটরগাড়ি, দুটি মোটরসাইকেল, ১০ ভরি স্বর্র্ণালংকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে তার। দোতলা একটি ভবনসহ পৈতৃক সূত্রে পাওয়া আড়াই একর কৃষি ও অকৃষি জমি রযেছে আলী হোসেনের। একটি বেসরকারি ব্যাংকে ৯ কোটি টাকার ঋণের কথা হলফনামায় উল্লেখ করেন।

 

 

সর্বশেষ খবর