বুধবার, ২৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

মানবাধিকারের আড়ালে পাচার

ইউরোপ ও আমেরিকা পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত

সাখাওয়াত কাওসার

‘প্রটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ নামে একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে একটি মানব পাচারকারী চক্র। তারা প্রথমে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করে। এরপর চক্রটি দূতাবাসের চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানব পাচার করে। তবে এবার শেষ রক্ষা হয়নি এই চক্রের সদস্যদের। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি দল গত রবিবার ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতাররা হলেন- মহিউদ্দিন জুয়েল, মো. উজ্জ্বল ওরফে মুরাদ, মো. এনামুল হাসান, শাহাদাদ ও হাদিদুল মুবিন। আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের নামে মানব পাচারের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সহকারী রিজিওনাল সিকিউরিটি অফিসার মিকাইল লি ২১ মে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সে মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। তদন্তে প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পেয়ে উল্লিখিত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ডিবি।

গ্রেফতারদের মধ্যে প্রটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন জুয়েল বিএসএস ও এলএলবি ডিগ্রিধারী। নির্বাহী পরিচালক উজ্জ্বল হোসাইন মাস্টার্স পাস। এ ছাড়া এনামুল এইচএসসি, শাহাদাদ বিএসএস ও হাদিদুল মুবিন মাস্টার্স পাস। ২০১৯ সাল থেকে তারা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি পাসপোর্ট, দুটি ভিজিটিং কার্ড, তিনটি এনওসি ও পাঁচটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেফতার মহিউদ্দিন জুয়েল ও উজ্জ্বল হোসাইন আন্তর্জাতিক মানব পাচার ও প্রতারক চক্রের হোতা। তারা প্রটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের আড়ালে টাকার বিনিময়ে ২০১৯ সাল থেকে মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে আমেরিকা, ফ্রান্সসহ উন্নত দেশগুলোতে মানব পাচার করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটিতে মানুষ বিভিন্ন ধরনের বিরোধ ও সমস্যা নিষ্পত্তির অভিযোগ নিয়ে এলে তারা কৌশলে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলত। পরে তাদের ইউরোপ ও আমেরিকা পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত।

জানা যায়, ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চক্রটি জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিলের বিভিন্ন কনফারেন্সসহ অন্যান্য কনফারেন্সের বিজ্ঞপ্তির খোঁজখবর রাখে। এ জন্য তারা বেশ কিছু ডকুমেন্টও তৈরি করে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরপরই প্রটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে তারা কনফারেন্সে যোগদানের জন্য জাতিসংঘ সদর দফতরে আমন্ত্রণপত্র চেয়ে ই-মেইল করে। জাতিসংঘ অনুমতি দিলে আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে আরও কিছু কাগজ সংযুক্ত করে মার্কিন দূতাবাসে ভিসার আবেদন করা হয়। দূতাবাস বিভিন্ন মেয়াদে তাদের ভিসা দেয়। তারপর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা সে দেশে অবস্থান করে। সূত্র আরও জানায়, গত ১৭ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘ সদর দফতরে আদিবাসীবিষয়ক একটি প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণের জন্য নামসর্বস্ব ওই প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে এনামুল হাসান ও হাদিদুল মবিন এবং কমিউনিকেশন অফিসার হিসেবে শাহাদাদ আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করে। পরে তারা আরও কিছু ভুয়া কাগজপত্র সংগ্রহ করে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে আবেদন পত্র জমা দেয়। তবে এবার কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় দূতাবাসের কাছে তাদের জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (উত্তর) উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এর আগেও আমরা মানব পাচারকারী চক্রের অনেক সদস্যকে গ্রেফতার করেছি। প্রতারকদের এ ধরনের কাজের জন্য বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। যারা প্রকৃতপক্ষে ভিসার আবেদন করেন তারা নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হন।

সর্বশেষ খবর