নকশিকাঁথায় ভাগ্য বদলেছেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার উদয়সাগর গ্রামের ২ শতাধিক নারী। কাঁথার জন্য এই গ্রামের নামই এখন নকশিকাঁথা পল্লী। বিভিন্ন ডিজাইনের নকশিকাঁথা বানিয়ে ভাগ্য বদলেছেন এখানকার নারীরা। শুধু নান্দনিক নকশিকাঁথাই নয় শাড়ি, ওয়ান পিস, টু-পিস, থ্রি-পিস ও সালোয়ার কামিজ কুশনসহ হাতের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করছেন। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশে। সরেজমিন দেখা যায়, উদয়সাগর গ্রামের শেফালি বেগমের বাড়িতে সকাল থেকে দলে দলে আসতে থাকেন বিভিন্ন বয়সী নারী। কেউ আসছেন কাজ করতে, কেউবা আসছেন নিজের বাড়িতে শেষ করা কাজ জমা দিয়ে আবারও নতুন কাজ নিতে। তার বাড়িতে দেখা যায় অর্ধশত নারী নকশিকাঁথার কাজ করছেন। এদের মধ্যে কেউ বারান্দায়, কেউ উঠানে বসে শাড়ি, থ্রি-পিস ও সালোয়ার কামিজসহ বিভিন্ন পোশাকে আঁকছেন সুই সুতা দিয়ে রঙিন কারুকাজ। নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় একেকটি পোশাকে ফুটে উঠছে নান্দনিক সব নকশা। উদয়সাগর এলাকার আমিনুল ইসলামের স্ত্রী রিনা (৫৫) বলেন, সপ্তাহে একদিনও আর বসে থাকতে হয় না তাদের। পারিবারিক কাজের ফাঁকে এখানে কাজ করা যায়। এখানে কাজ করে সংসার চালাতে পারছি। নিজে খরচ চালাতে পারছি। নকশিকাঁথা তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছি। নকশিকাঁথায় স্বপ্ন বুননে পিছিয়ে নেই কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। তারাও নকশিকাঁথার পাশাপাশি তৈরি করছেন মেক্সি, বেবি টপ, ওড়না, শাড়ি, ওয়ান পিচ, টুপিচ থ্রি-পিস, বেডশিড, নকশি চাদর, কুশন, কভারসহ বিভিন্ন আধুনিক পণ্য। কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এই উদয়সাগর গ্রামের নারীরা। কিছুদিন আগেও তাদের সংসারে অভাব ছিল। পরে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাপড়ের নকশার কাজ করায় এখন বাড়তি উপার্জন হচ্ছে। তারা প্রত্যেক মাসে চার থেকে ছয় হাজার টাকা আয় করছেন। সেফালি বেগম নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। এলাকার সবার কাছে যার পরিচয় একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে। নিজে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি গ্রামের ৭৫ জন নারী কর্মীকে বিআরডিবি থেকে প্রশিক্ষণ পাইয়ে দিয়েছেন। এলাকার সবাই মিলে দারিদ্র্যকে জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে। এ ব্যাপারে গাইবান্ধা বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র রায় বলেন, জেলায় অসহায়-কর্মহীন নারীদের স্বাবলম্বী করতে বিসিক থেকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নকশিকাঁথায় উদ্যোক্তাদের পাশে থেকে বিভিন্ন ডিজাইন সরবরাহসহ ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য আর্থিক সহায়তা করা হবে। গাইবান্ধা ২২টি পণ্য ভিত্তিক পল্লী গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে জেলায় ৭টি নকশিকাঁথা পল্লী রয়েছে। এ কাজে জড়িত রয়েছে ১৮৭০টি পরিবার।