বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় সংস্কার দাবি করেছেন সংস্থার বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুরক্ষার লক্ষ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সব শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা কাজী ছাইদুর রহমানের কক্ষে ঢুকে পড়েন এবং তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। কাজী ছাইদুর রহমান একটি সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র লিখে স্বাক্ষর করে সিল দেন এবং ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, মো. খুরশীদ আলম, হাবিবুর রহমান, উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের ও বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস অফিস থেকে বেরিয়ে যান। সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দেশত্যাগ করেছেন। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফ্লোরে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ডেপুটি গভর্নরদের নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তারা থাকবেন নাকি চলে যাবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও বিএফআইইউ-প্রধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। এদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সদ্যপদত্যাগী সরকার। ফলে নতুন কোনো সরকারকেই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি জানান, গভর্নর ছুটিতে আছেন। এখন ডেপুটি গভর্নরেরা দায়িত্ব পালন করে যাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মীদের দাবিদাওয়া সরকারের কাছে পেশ করা হবে। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মচারীরা আজ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন দাবিদাওয়া উত্থাপন করেছেন, যেমন পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন, পে-স্কেল, সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ ইত্যাদি। এসব অসন্তোষের কারণে কর্মচারীরা শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করেছেন বলে উল্লেখ করেন মেজবাউল হক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও বিএফআইইউ-প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল ভবনে গভর্নর ফ্লোরে ঢুকে পড়েন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে গতকাল দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সামগ্রিক সংস্কারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুরক্ষায় স্বৈরাচারী সরকারের দুর্নীতিবাজ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সব শীর্ষ কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষ থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের স্বার্থে ডেপুটি গভর্নর নুরুন্নাহার তাঁর বর্তমান পদে বহাল থাকবেন এবং পরবর্তী গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর পদত্যাগ করবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব সাবেক কর্মকর্তা দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পুরস্কারস্বরূপ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হবে মর্মেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ইতোমধ্যে রাতের আঁধারে দেশত্যাগ করেছেন মর্মে জানা গেছে।এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এই কর্মকর্তাসহ চুক্তিভিত্তিক ও নিয়মিত অন্য কর্মকর্তাদের আর্থিক অনিয়মের তদন্ত দ্রুততার সঙ্গে শুরু এবং তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পরবর্তী সরকারের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপামর কর্মকর্তারা দাবি জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর এ আন্দোলনের মূল প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে গত ৬ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নরদের দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার স্বীকারোক্তি। দেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এ রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থের জন্য দুর্নীতি সাধন করে দেশের ব্যাংকিং খাত ও অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থায় চিড় ধরিয়েছেন। স্বৈরাচারী সরকারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত এসব শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে। তাঁরা বলেন, রাষ্ট্র মেরামতের এ ঐতিহাসিক ক্ষণে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুযোগ হাতছাড়া করলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সততা ও সাহসের সঙ্গে জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণে রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব যাতে পালন করতে পারেন সে পরিবেশ তৈরি করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো যাচ্ছে। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান ও স্বাভাবিক থাকবে।