বগুড়ায় দুর্লভ প্রজাতির শামুকখোল পাখি বিভিন্ন গাছের শাখায় জোড়ায় জোড়ায় সংসার পেতেছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর কলকাকলিতে মুখরিত বগুড়ার বিভিন্ন অঞ্চল। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পাখিপ্রেমীরা। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখে মনে হবে এ যেন পাখির স্বর্গরাজ্য। জেলার শেরপুর, নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, কাহালু ও শিবগঞ্জের বটবৃক্ষের ডালে ডালে এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। আশ্রয়স্থলের আশপাশে ওড়াউড়ি করে যেন ডানায় ডানায় ভোরের আলো ফোটায় ও গোধূলির আভায় সন্ধ্যা নামায়। এ দৃশ্য অমলিন। দিনশেষে তাদের নিড়ে ফেরার দৃশ্য তাক লাগায়। মনে হয় হেলিপ্যাডে নামছে হেলিকপ্টার। দূর থেকে গাছে তাকালে মনে হয় ডালে ডালে বড় ফল ধরে আছে।
বাংলাদেশে বড় পাখিদের একটি শামুকখোল। ধূসর সাদা শামুকখোলের লেজ ও পাখার শেষ অংশ কালো রঙ্গের। পাখিটি ৮১ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য এবং এর পাখার দৈর্ঘ্য হয় চুয়াল্লিশ সেন্টিমিটার। শামুকখোলের দেহের সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে ঠোঁট। প্রায় ১৪ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য দুই ঠোঁটের মাঝে ফাঁকা থাকে। শামুকখোল সব সময় দল বেঁধে চলে।
সামাজিক বন বিভাগ বগুড়ার বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মতলুবুর রহমান জানান, শামুকখোল পাখি বিশালাকার জলচর। সাইকোনিডি গোত্রের বলে বলা হয়। সাইকোনিডিয়া গোত্রের কয়েক হাজার পাখি নিয়মিত আবাস হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বিপন্ন হওয়া বড়োসড়ো গড়নের এ প্রজাতির পাখি ঝাঁক বেঁধে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার বড় বড় বৃক্ষে আশ্রয় নিয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার শামুকখোল পাখি সংসার পেতেছে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায়। পাখির সংসার দেখতে পাখিকলোনিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করছেন।
জানা গেছে, বিরল প্রজাতির শামুকখোল পাখি। সারস জাতীয় পাখি এটি। স্থানীয়দের কাছে শামুক ভাঙা, হাইতোলা মুখ এসব নামেও পরিচিত। খাল-বিলের ছোট ছোট শামুক-ঝিনুক, ছোট মাছ, আর ফসলের মাঠের পোকামাকড় খেয়ে জীবন বাঁচায় শামুকখোল পাখি। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় ভদ্রাবর্তী নদী, নাগর নদী, খাল-বিল বা জমিতে দেখা মিলছে দৃষ্টিনন্দন শামুকখোল পাখির। ঝাঁক বেঁধে শামুকখোলের খাবার শিকার বা উড়ে চলা যেন প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে। উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের ভদ্রাবতী নদীতে ও মাঠের জমিতে এক ঝাঁক শামুকখোল পাখি আহার করছে। আরেক ঝাঁক শামুকখোল পাখি বসে আছে গাছের মগডালে। এই শামুকখোল পাখির আনাগোনা শুরু হয়েছে প্রায় দুই বছর ধরে। জায়গাটি যেন তাদের অভয়ারণ্য। তাদের পাখার ঝাপটা আর কোলাহলে আকাশ-বাতাস মাতিয়ে রাখে। সকালে সোনালি রোদ আর গোধূলির মৃদু আলোয় তাদের অবয়ব বাড়তি এক অপূর্ব সৌন্দর্যের অবতারণা ঘটায়।