ঘরোয়া ফুটবলে নতুন মৌসুমে নতুনত্ব আসছে। যা কখনো হয়নি, এবারই তা হবে। এক মৌসুমে পাঁচ আসর যা ফুটবলে আলো ছড়াবে। আর এতেই ক্লাবগুলোর রেকর্ড গড়ার হাতছানি দিচ্ছে। স্বাধীনতার পর মোহামেডান, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও বসুন্ধরা কিংসের ট্রেবল, অর্থাৎ এক মৌসুমে তিন শিরোপা জেতার রেকর্ড রয়েছে। আসছে মৌসুমে তার চেয়ে বেশি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। কেননা চ্যালেঞ্জ কাপ, ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ ও পেশাদার লিগের পাশাপাশি ক্যালেন্ডারে যোগ হয়েছে সুপার কাপ। ২০০৯ সালে কোটি টাকার প্রাইজমানির এ টুর্নামেন্টের অভিষেকের পর দেশের ফুটবলে ব্যাপক সাড়া ফেলে ছিল। কথা ছিল সুপার কাপ পরে আরও বড় পরিসরে করা হবে। কিন্তু কথা রাখেনি বাফুফে। তিনবার আয়োজন করে টুর্নামেন্টের ইতি টানে।
বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসানের উদ্যোগে জনপ্রিয় সুপার কাপ মাঠে ফিরছে। গত মৌসুমেই হওয়ার কথা ছিল। সময়স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এবার মৌসুমের শেষ আসরটি হবে সুপার কাপ আর তা শুধু স্থানীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে। কটি দল অংশ নেবে তা চূড়ান্ত না হলেও বিদেশি ফুটবলারবিহীন হবে তা নিশ্চিত করেছে পেশাদার লিগ কমিটি। গত মৌসুমে অবশ্য স্বাধীনতা কাপও হতে পারেনি। লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান বলেছেন, ‘এবার আমরা পাঁচ আসর করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ ১৪ আগস্ট দলবদলের কর্মসূচি শেষ হবে। সেপ্টেম্বরেই ২০২৫-২৬ মৌসুমের পর্দা উঠবে। চ্যালেঞ্জ কাপ দিয়েই মৌসুম শুরু হবে। তার আগে বসুন্ধরা কিংস ও ঢাকা আবাহনী এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে অংশ নেবে। দুই দলই প্রশিক্ষণ শুরু করে দিয়েছে।
পাঁচ আসর মানেই ক্লাবগুলোর রেকর্ড গড়ার হাতছানি। ১৯৪৮ সালে ঘরোয়া ফুটবলের যাত্রার পর কোনো ক্লাবেরই এক মৌসুমে তিনের অধিক শিরোপা জেতার রেকর্ড নেই। হবেই বা কীভাবে, কখনো তো তিন টুর্নামেন্টের বেশি হয়নি। পূর্ব পাকিস্তান আমলেও অধিকাংশ সময় তিন আসর হয়েছে। প্রথম বিভাগ লিগ ছাড়া স্বাধীনতা কাপ ও আগা খান গোল্ডকাপ মাঠে গড়াত। ঢাকা মোহামেডানেরই দুবার এক মৌসুমে লিগের পাশাপাশি স্বাধীনতা কাপ ও আগা খান গোল্ডকাপ জেতার রেকর্ড রয়েছে। ২০০২ সালে মোহামেডান জিতেছিল প্রিমিয়ার লিগ, ফেডারেশন কাপ ও জাতীয় লিগ; যা পরে শেখ রাসেল স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপ ও লিগ পেয়ে ট্রেবল জেতার কৃতিত্ব গড়েছিল। বসুন্ধরা কিংসেরও সেই রেকর্ড রয়েছে।
এবার যেহেতু পাঁচ আসর, কোনো ক্লাব কি চার বা পাঁচ শিরোপা জিতে নতুন রেকর্ড গড়বে? সেই সামর্থ্য কার আছে? ফুটবল মাঠে গড়ানোর আগে তা বলা মুশকিল। তবে শক্তির কথা বললে এ ক্ষেত্রে সবার আগে উচ্চারিত হবে কিংসের নামই। কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবে তারা উঁচুমানের দল গড়েছে। লোকাল ও ফরেন কালেকশন মেলালে অপ্রতিরোধ্য বলা যায়। প্রবাসী বলে কিউবা মিচেল স্থানীয় কোটায় খেলবেন। বিদেশিদের মধ্যে আগে খেলে যাওয়া লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা ডরিয়েলটনের পাশাপাশি আবাহনীর রাফায়েলকে দেখা যাবে। মোহামেডানের ডিফেন্ডার টনি ও সানডেকে দলে ভিড়িয়েছে কিংস। স্থানীয়দের মধ্যে আগের তারকারা থাকছেন। সেই সঙ্গে আবাহনীর মোহাম্মদ হৃদয়, শাহরিয়ার ইমন, রহমতগঞ্জের তাজউদ্দিন ও তানভীর এসেছেন। আগামীকালের মধ্যে নতুন ব্রাজিলিয়ান কোচ ও মিচেলের ঢাকা পৌঁছানোর কথা। সব মিলিয়ে যে মানের দল তাতে সব ট্রফিই জেতার সামর্থ্য রয়েছে কিংসের।
ঢাকা আবাহনীর শক্তিও বেড়েছে। কিংস থেকে শেখ মোরসালিন, পুলিশের আল আমিন, কাজিম শাহ ও মোহামেডানের সফল বিদেশি সুলেমান দিয়াবাতেকে নিয়েছে। আগের চেয়ে শক্তি বাড়লেও তা কিংসের সমান নয়। এবার শিরোপা লড়াই দুই দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে অন্য দল যদি একটিও ট্রফি জেতে শক্তির বিচারে তা হবে অঘটন। লিগ চ্যাম্পিয়ন হলেও মোহামেডানের অবস্থান এখন পর্যন্ত নাজুকই বলা যায়।