উখিয়ার অনিয়ন্ত্রিত কুতুপালং থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী বালুখালী এলাকায় শত শত একর সরকারি বনভূমি দখল করে নতুন বসতি নির্মাণ করে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এক শ্রেণীর অসাধু চক্র এ বস্তিতে প্রায় ৩ হাজার পরিবারকে স্থান করে দিয়েছে বন সম্পদ ধ্বংস করে।
সরকারের কোন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এখানে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের নিয়ে শংকিত অবস্থায় দিনযাপন করছে এলাকাবাসী। স্থানীয়দের মতে, প্রতিদিনই বালুখালী বস্তিতে নতুন শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার ঢুকছে। এতে বন সম্পদ ধ্বংসের পাশপাশি আইনশংখলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা করছেন তারা।
রবিবার সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, উখিয়া উপজেলার বালুখালী বনবিটের অধিনে বনবিভাগের বিশাল জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে রোহিঙ্গা বস্তি। যাতে ১৫ হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে। প্রতিদিনই এ বস্তিতে নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে রোহিঙ্গা পরিবার। চলছে বনভুমি দখল ও বস্তি নির্মান কাজ। স্থানীয় বালুখালী গ্রামের প্রবীন বাসিন্দা রওশন আলী (৬০) জানান, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী চক্র বস্তি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। সামাজিক বনায়নের বিপুল পরিমান গাছ কেটে এ বস্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত বিপুল পরিমান এ রোহিঙ্গার কারণে এলাকার পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন।
স্থানীয় আরো বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী তার সাথে সুর মিলিয়ে বলেন, প্রায় প্রতিদিন নতুন গড়ে উঠা বালুখালী বস্তিতে প্রায় ১০০ করে পরিবার ঢুকছে বর্তমান রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়। এছাড়াও প্রতিদিনই কোন না কোন সংগঠন এ বস্তিতে অনুমতি ব্যাতিত ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছে বলেও জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালুখালী এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী এনামুল হক, ইমাম হোসেন সহ বেশ কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী বিভিন্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রোহিঙ্গাদের বস্তি নির্মানের সহায়তা করছে। নির্মানকৃত এসব বস্তিতে রোহিঙ্গাদের ফ্রি থাকাসহ খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে তারা। এসব সুযোগ-সুবিধার কথা মিয়ানমারে প্রচার হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে আবারো ব্যাপক হারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। সীমান্তে নিয়োগ করা দালাল মারফত বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তিতে রোহিঙ্গাদের সমাগম বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
রবিবার সকালে বালুখালী বস্তিতে ঢুকে পড়ার আগ মুহুর্তে কথা হয়, মিয়ানমারের মংডু কিয়ারী পাড়া এলাকা বিধবা ছৈয়দা খাতুন (৬০) এর সাথে। এসময় তিনি বলেন, মিয়ানমারের সেনা নির্যাতন সইতে না পেরে বাংলাদেশে তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে শনিবার রাতের-আধারে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ি। সেখান থেকে অপরিচিত এক দালালকে ৫০০ টাকা দিয়ে বালুখালী পান বাজারে আসি। তার পরিবারের ৪ জন ছেলে/মেয়ে আছে। তার মতো, আরো অনেকে আজকের মধ্যে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
স্থানীয় জাফর ইকবাল অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তিদের সহায়তায় তার জায়গাসহ বেশকিছু লোকদের জায়গায় রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এভাবে বস্তি গড়ে তুললেও প্রসাশন এ ব্যাপারে নিরব ভুমিকা পালন করছে। ফলে প্রসাশনের ভুমিকা নিয়ে স্থানীয় জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বালুখালীতে রোহিঙ্গা বস্তি সৃষ্টিকে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির জন্য মারাত্বক হুমকি উল্লেখ করে বলেন, এ ব্যাপারে আমি আমার বক্তব্য উপজেলা পরিষদের আইনশৃংখলা বিষয়ক সমন্বয় সভায় স্পষ্ট করে বলেছি।
উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, বনবিভাগের বিশাল এলাকা রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রশয় দেওয়ার ফলে রোহিঙ্গারা এসব বনভূমি দখল করতে সক্ষম হয়েছে। উচ্ছেদ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের হামলার শিকার হয়েছে বনকর্মীরা।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ইন্ধন ছাড়া রোহিঙ্গাদের এমন সাহস হওয়ার কথা না। আমরা সবকিছু এখন খতিয়ে দেখছি।
বিডি প্রতিদিন/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/হিমেল