অবশেষে বাংলা সাহিত্যের চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক প্রমথ চৌধুরীর পাবনার পৈত্রিক বসতভিটা দখল মুক্ত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বুধবার সকালে চাটমোহর সহকারী ভূমি কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়। অভিযান পরিচালনা করে তিনি ৩ একর (৯ বিঘা) জায়গায় নির্মিত কাঁচা-পাকা মিলিয়ে ১৮টি বসত ঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করেন।আর প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বীরবলের হালখাতা, চার ইয়ারী কথা, আহুতি, নীলোলোহিতসহ অসংখ্য গ্রন্থের কালজয়ী লেখক প্রমথ চৌধুরীর পৈত্রিক নিবাস পাবনা চাটমোহর উপজেলার হরিপুরে। প্রায় ৩ একর জায়গার উপর অবস্থিত বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে ১৬টি পরিবার অবৈধ দখলে রেখেছিল। স্থানীয় জনগণের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের প্রমথ চৌধুরীর বাস্তুভিটা ছেড়ে দিতে নোটিশ দেয়। এরপরও তারা দখল না ছাড়ায় প্রশাসন বুধবার তাদের উচ্ছেদ করে।
এদিকে, সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর বাড়ি দখলমুক্ত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে স্মৃতি রক্ষার্থে তার নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ প্রসঙ্গে প্রমথ চৌধুরী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উপদেষ্টা হেলালুর রহমান জুয়েল বলেন, উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী আমাদের পাবনার গর্ব। অবৈধ দখলদাররা তার স্মৃতিচিহ্ন দিনে দিনে নষ্ট করেছে। তাই বাড়ি উদ্ধারে আমরা আন্দোলন করেছি। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করে বাড়ি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করায় আমরা খুবই খুশি। সরকারের নিকট আমাদের দাবি এ কালজয়ী সাহিত্যিকের স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর পৈত্রিক ভিটায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হোক।
বাড়ি উচ্ছেদের বিষয়ে চাটমোহর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান জানান, এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া মেনে প্রমথ চৌধুরীর বাস্তুভিটা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। প্রমথ চৌধুরীর স্মৃতি ধরে রাখতে এলাকাবাসীর দাবির বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলার খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম প্রমথ চৌধুরীর পৈতৃক নিবাস ছিল পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন বরেন্দ্র এলাকার ব্রাহ্মণ জমিদার। দুঃখের বিষয় যিনি বাঙালির মণি কোঠায় অধিষ্ঠিত, সেই বিখ্যাত সাহিত্যিকের পৈতৃক নিবাস দখল করে নিয়ে বসত ঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেছিলেন ওই এলাকার কয়েকজন দখলদার।
তারা এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে তাঁর (প্রমথ চৌধুরীর) নিবাসস্থলের ইট থেকে শুরু করে জানালা-দরজা সবকিছুই খুলে নিয়ে যায়। এমন অবস্থা দেখে কিছুদিন পূর্বে তাঁর পৈতৃক নিবাসকে দখলমুক্ত করতে ‘চাটমোহর প্রমথ চৌধুরী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন আন্দোলন গড়ে তোলে এবং সম্প্রতি তারা মানববন্ধন করে এবং পাবনা জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালোর কাছে স্মারকলিপি দেন। পরে জেলা প্রশাসক দখলমুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিলে বুধবার জায়গাটি দখলমুক্ত হয়।
এ ব্যাপারে প্রমথ চৌধুরী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ইকবাল কবির রঞ্জু বলেন, ‘দীর্ঘদিন আন্দোলনের পর জায়গাটি দখলমুক্ত হওয়ায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে তাঁর (প্রমথ চৌধুরীর) স্মৃতি সংরক্ষণার্থে জায়গাটিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিডি-প্রতিদিন/১৯ এপ্রিল, ২০১৭/মাহবুব