রাজশাহীর রেশম দেশসেরা। ঈদের কেনাকাটায় রেশমের একটা কিছু থাকবে না-তাই কি হয়? তাই তো এর অভিজাত্য এখনও টেক্কা দিচ্ছে নতুন ফ্যাশনকে। এবারের ঈদের কেনাকাটাতেও রেশমের প্রতি আগের মতো টান নারী-পুরুষ সবার। রেশমের তৈরি কাপড় সারা বছর ধরে বিক্রি হলেও ঈদে তার কদর বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
ঐতিহ্যের পরম্পরায় তাই রেশম ও রাজশাহী দুটি নামই বহন করছে একে অপরের পরিচিতি। রাজশাহীর মানুষের ঈদ আর সিল্ক যেন তাই একই সুতোয় গাঁথা। রেশমের পোশাক ছাড়া যেনো ঈদের খুশিই মলিন হয়ে যায়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবার সামনে হাজির করছে নিত্য নতুন রেশমী পোশাক। নানান রঙের থ্রিপিস, রেশমী শাড়ি না হয় পাঞ্জাবি। ঈদে তাই রাজশাহীর মানুষের শরীরে রেশমের শুভ্রতা লাগবেই। রেশমের প্রতি নারীদের বিশেষ টান যেমন নতুন কিছু নয়। তেমনি এমন অনেক পুরুষও আছেন ঈদে যাদের রেশমের পাঞ্জাবি লাগবেই। এজন্য নতুন নতুন চটকদার ভিনদেশি সব নাম আর দামের পোশাকের ভিড়ে রেশমের অভিজাত্য এতটুকুও হারায়নি। এখনও রাজশাহীর মানুষ রেশম ছাড়া উৎসবের কথা ভাবতেই পারেন না।
বাজার ঘুরে দেখলেই বোঝা যায়, ক্রেতাদের মধ্যে রেশমের চাহিদা কত। আর এই বিষয়টি মাথায় রেখেই শেষ সময়ে রাত-দিন এক করে কাজ যাচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী রাজশাহীর বিভিন্ন সিল্ক ফ্যাক্টরির কারিগর ও মালিকরা। সিল্ক সুতা দিয়ে নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস ও শিশুদের পোশাক তৈরি করছেন তারা। লক্ষ্য চাঁদ রাত পর্যন্ত উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া।
রাজশাহী মহানগরীর সপুরায় থাকা রেশমপল্লীতে ঈদের প্রস্তুতিটা শুরু হয় ঈদের এক মাস আগেই। পুরো রমজান জুড়েই থাকে জমজমাট বেচাকেনা। তবে এবার শুরুর দিকে ভীড় কম থাকলেও শেষ দশকে যেন দম ফেলারও সুযোগ নেই রেশম কারখানার নারী ও পুরুষ কর্মীদের।
চোখ ধাঁধানো রঙ আর বাহারি ডিজাইনের অভিজাত রেশমী পোশাকের টানে সকাল থেকেই সেখানে ছুঁটছেন সব বয়সের ক্রেতা। থরে থরে সাজানো হাজারো কাপড়ের ভিড়ে নিজের ও পরিবারের প্রিয় মানুষগুলোর জন্য স্বতন্ত্র ও সেরা পোশাকটি পরখ করে নিচ্ছেন তারা। রেশমের মুগ্ধতায় অনেক তরুণী কোনটা রেখে ঠিক কোনটা নেবেন ধন্ধে পড়ে যাচ্ছেন। সাহায্য নিচ্ছেন স্বজনদের।
সপুরা সিল্কের শো-রুমে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন মহানগরীর সুলনাতাবাদ এলাকার গৃহীনী শবনম মোস্তারি। তিনি বলেন, তার ও তার শাশুড়ির জন্য রেশমের শাড়ি এবং স্বামীর জন্য রেশমের পাঞ্জাবি কিনতে এসেছেন। একই ছাদের নিচে আছে সন্তানের পোশাকও। রাজশাহী সিল্ক দেশজুড়ে সমৃদ্ধ। তাই ঈদে তার পরিবারের পছন্দে রেশমী পোশাকের কদিই বেশি বলে জানান শবনম।
এখানে সিল্ক শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮৯৯ টাকা থেকে ২২ হাজার টাকার মধ্যে। পাঞ্জাবি আছে ৮৯৯ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। সিল্ক ছাড়াও সুতির পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। মসলিন সিল্ক আছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। মটকা সিল্ক আছে ৩ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। থ্রিপিস আছে ২ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায়। সিল্কের শার্ট আছে ৭০০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকার মধ্যে।
ফুলহাতা ও হাফহাতা ডিজাইনের বিভিন্ন রঙের ফতুয়া আছে সাড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। সুতি শার্ট আছে ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। কাটোয়ার ডিজাইনের শাড়ি, সফট সিল্ক শাড়ি আছে ১ হাজার ৬৫০ থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে। এন্ডি সিল্ক আছে ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৫ হাজার টাকায়।
বলাকা সিল্ক আছে ৪ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকায়। র-মসলিন আছে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। বলাকা স্টিজ শাড়ি আছে ৬ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া আছে পার্টি ড্রেস, কন্ট্রাস্ট থান শাড়ি, সুুতি পোশাক, স্যান্ডেল ও জুতোসহ বাহারি সব পণ্যের সমারোহ।
রাজশাহীর সপুরা শো-রুমের ম্যানেজার সাইদুর রহমান জানান, ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিনই নতুন নতুন নকশার পোশাক যোগ করছেন তারা। তবে এবারের ঈদে বড় আকর্ষণ কাটোয়ার ডিজাইনের শাড়ি। আর আছে র-সিল্কের ওপর হাতের কারুকাজ। এ বছর ঈদে বেশি বিক্রি হচ্ছে ‘পার্টি ড্রেস’। এটি শিশু- কিশোরদের মধ্যে বেশ সারা ফেলেছে বলেও জানান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন