বিশিষ্ট সমাজ সেবক পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের সাধনপুর পঙ্গু শিশু নিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাদা মনের মানুষ আব্দুল মজিদ আর নেই। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকার মিরপুরে থাকা কিডনি ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দীর্ঘদিন থেকে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি তিন ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সাদা মনের মানুষ আব্দুল মজিদের মরদেহ শুক্রবার সকালে নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। তার জানাজার নামাজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় নিজ হাতে গড়া পঙ্গু শিশু নিকেতন ডিগ্রি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল।
সাধনপুর পঙ্গুশিশু নিকেতন ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বারনই নদীর ধারে পঙ্গু প্রতিবন্ধী শিশুদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে লক্ষ্যে ‘একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ এই মূল মন্ত্রে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আব্দুল করিমের বড় ছেলে আব্দুল মজিদ এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি। আব্দুল মজিদের একমাত্র কন্যা বেবি বালি অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী হলে তিনি মেয়েকে নিয়ে দেশ-বিদেশে বহু চিকিৎসা করান। কিন্তু মেয়েকে বাঁচাতে পারেননি তিনি। সেখান থেকেই আব্দুল মজিদের উপলব্ধি হয় প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য কিছু করার। আর এ উপলব্ধি থেকে প্রতিষ্ঠা করেন সাধনপুর পঙ্গু শিশু নিকেতন। খুব স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও বর্তমানে এটি প্রায় ৩০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এখানে পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চবিদ্যালয়, একটি কলেজ, একটি সমন্নিত অন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাঠাগার এবং একটি শিশু পার্ক ইত্যাদি। স্বাস্থ্যসেবার জন্য রয়েছে স্বাস্থ্য কমপেক্স, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ব্যবস্থা। সব গরিব পঙ্গু প্রতিবন্ধী শিশুদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।
উত্তরে বারনই নদী, পূর্বে বিদির পুর খাল, পশ্চিমে পাকা রাস্তা, দক্ষিণে মাঠ, বিশাল ক্যাম্পাসে গড়ে উঠা এই প্রতিষ্ঠান যেমন মানব সেবার একাটি অনন্য দৃষ্টান্ত তেমনি এখান কার সৈন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে। আব্দুল মজিদকে তাঁর এই অসাধারণ কাজের জন্য শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ ২০০৬ সালে সংর্বধনা প্রদান করে। এছাড়া পরের বছর অর্থাৎ ২০০৭ সালে তাঁকে সাদা মনের মানুষ হিসেবে সম্মাননাও প্রদান করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ