বগুড়ার তিনটি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় কোরবানির আগে খামারিরা তাদের গৃহপালিত গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী নিয়ে একঘরে অবস্থান নিয়েছে। কেউ কেউ আবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিলেও রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছে কোরবানিযোগ্য গরু, ছাগল। তবে এখন পর্যন্ত একটি গবাদি পশুরও ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে এগুচ্ছে। যমুনার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১৭ সে. মিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের মাধ্যমে জানা যায়, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভার ১শ ২৩টি গ্রামে ২৫ হাজার ৭শ পঞ্চাশটি পরিবারের ১ লাখ ৩শ লোক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বন্যায় ১৩৪টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি ও ৭ হাজার ৫৮৭ হেক্টর কৃষি জমির ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১২শ পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এবং ৯৫০টি পরিবার চর এলাকার আশ্রয়ন প্রকল্প ও গুচ্ছ গ্রামের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার আগে থেকেই তারা উঁচু স্থানে চলে যায়। যে কারণে কোন গবাদি পশু বা হাঁস, মুরগীর ক্ষতি হয়নি। এই উপজেলায় প্রতি বছর একই সময়ে বন্যা হয় বলে আগাম প্রস্তুতি থাকে। সে কারণে প্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি কমে যায়।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন দুলাল জানান, মানুুষের পাশাপাশি তাদের গৃহপালিত গরু, ছাগল, ভেড়া নিয়েও রয়েছে বিপদে। চারিদিকে পানি উঠায় গরু-ছাগল নিয়ে একই স্থানে গাদাগাদি করে থাকছে। কোরবানি যোগ্য বেশি কিছু পশু থাকলেও সেগুলো বন্যাকবলিতরা উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় পরিবার নিয়ে ব্যস্ত আরেক দিকে কোরবানীর হাটের কথা মাথায় নিয়ে সংকটের মধ্যে রয়েছে বানভাসিরা।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সরওয়ার আলম জানান, দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দেওয়ায় উপজেলার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বন্যায় আক্রান্তদের জন্য জিআর চাল, নগদ টাকা, শুকনা খাবার ও তাবুর চাহিদা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার গবাদি পশুর জন্য কিছু কিছু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, জেলার ১২টি উপজেলায় মোট খামারী রয়েছে ৪০ হাজার ৮০৯টি। এরমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকা তিনটি উপজেলায় খামারী আছে সোনাতলায় ২৫ হাজার ৭৪৭টি, সারিয়াকান্দিতে ৩৪ হাজার ৫৫৭টি, ধুনট উপজেলায় ৩২ হাজার ৫৮৮টি।
এই তিনিটি উপজেলায় বা বন্যা কবলিত এলাকায় সব মিলিয়ে ৭৭ হাজার গাবাদি পশু রযেছে। এর মধ্যে কোরবানিযোগ্য রয়েঠে ২২ হাজার। বন্যায় এখন পর্যন্ত একটি গবাদি পশুরও ক্ষতি হয়নি। এখনো কোন রোগবালাই দেখা দেয়নি। তবে যে খামারিরা বন্যার মধ্যে পড়েছে তারা গরু ছাগল নিয়ে এক সাথেই আছে। জেলায় গরু প্রস্তুত রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৫২টি। মহিষ ২ হাজার ৮১৩টি, ছাগল ১ লাখ ৩২৫২টি এবং ভেড়া রয়েছে ১৯ হাজার ৬৬৯টি।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন