সারাদেশের মতো নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের টিকাদান কার্যক্রম চলছে। এই উপজেলায় প্রথম দফায় টিকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৯৭০ ডোজ। সোমবার পর্যন্ত আবেদন পড়েছে ৩ হাজার ২৮৫টি আর টিকা গ্রহণ করেছেন ২ হাজার ৫৮৮ জন। স্বাস্থ্য সেবাদানকারী, সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ প্রশাসন, শিক্ষক সমাজ ও সচেতনমহলের মানুষরা আগ্রহ ভরে এই টিকা গ্রহণ করলেও সাড়া মিলছে না প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মো. মাকসুদুর রহমান সনি বলেন, জেলায় প্রথম এই হাসপাতালের এক সেবিকা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এরপর এখন পর্যন্ত ৬৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬৭ জন আর মারা গেছেন ১ জন। মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৪৭৯টি। টিকাদানের শুরুতে মানুষের মাঝে তেমন আগ্রহ দেখা না গেলেও বর্তমানে সুশিল সমাজের মানুষরা আগ্রহ ভরে টিকা গ্রহণ করছেন কিন্তু সচেতনতার অভাবে সাড়া মিলছে না প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষদের মাঝে। সচেতনতা ও প্রচার-প্রচারণার অভাবে এসব মানুষরা টিকা গ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে এখনো ওয়াকিবহাল রয়েছেন। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড ভিত্তিক সদস্যরা, শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিরা, মসজিদের ইমামরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল মিরাট ইউনিয়নের ধনপাড়া গ্রামের মধ্যবয়স্ক দিনমজুর ফজলুর রহমান, কলিম উদ্দিন মানুষের মুখে শোনার পর করোনা ভাইরাসের টিকা নিতে হাসপাতালে এসেছেন। হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে তারা হাসপাতাল ঘুরছেন। কোথায় কিভাবে আবেদন করে করোনা টিকা নিতে হবে তা তাদের অজানা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১টি কেন্দ্রের ৩টি বুথের মাধ্যমে এই টিকাদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করছেন। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই উপজেলায় টিকা গ্রহণের উপযুক্ত জনসংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ, কিন্তু এখন পর্যন্ত ৬ হাজার আবেদনই পড়েনি।
সচেতনমহল ও সুশিল সমাজের মানুষই এই টিকা বেশি গ্রহণ করছেন। প্রত্যন্ত এলাকার খেটে-খাওয়া, পিছিয়ে পড়া ও হতদরিদ্ররা টিকা গ্রহণ করছে না বললেই চলে। আমার স্বাস্থ্যকর্মীরা যে মানুষদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন তারা শুধুমাত্র টিকা গ্রহণ করছেন। টিকা গ্রহণের রেজিস্টেশন কার্যক্রম অনেক জটিল হওয়ার কারণে এসব মানুষরা আগ্রহী নন। তাই ইউনিয়ন ভিত্তিক তথ্যসেবা দান কেন্দ্রগুলো থেকে যদি এই সব মানুষদের টিকা গ্রহণের রেজিস্টেশন করার সুবিধা প্রদান করা হতো এবং গ্রাম ভিত্তিক সচেতনামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে টিকা গ্রহণে গ্রামভিত্তিক মানুষদের আগ্রহ আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন