বগুড়া শহরের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ফতেহ আলী সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। নির্মাণ কাজের জন্য আগামী ১৬ জানুয়ারি ঠিকাদানর প্রতিষ্ঠান নিযোগ পেতে যাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষের চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি টাকা।
সেতুটি নির্মাণ হলে জেলার চারটি উপজেলার মধ্যে সরাসরি সংযোগ আবারো চালু হবে। সেতুটি দিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহনে নতুন করে আলো দেখবে।
জানা যায়, ১৯৬২ সালে করতোয়া নদীর ওপর ৬৮ মিটার দীর্ঘ ফতেহ আলী সেতু নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সে সময় সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। নির্মাণের ৯ বছর পর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেতুটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরে দেশ স্বাধীনতার পর সেটি মেরামত করে জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়। এরপর থেকে আর কোন সংস্কার না থকায় দিনদিন সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী ও বগুড়া সদর উপজেলাবাসি এই সেতু হয়ে সরাসরি যোগাযোগ করে থাকে। পূর্ব বগুড়ার লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের ভরসা ষাট বছর বয়সী সেতুটি। সেতুটি চারটি উপজেলার মানুষের চলাচলের জন্য অত্যন্ত জনগুরুত্ব বহন করে আসছে। সাধারণ মানুষের যেমন চলাচলের ভরসা তেমনি কৃষিপণ্যসহ সকল প্রকার যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এই সেতুটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সেতু দিয়ে চার উপজেলার কৃষি পণ্য পরিবহনে ভূমিকা রয়েছে। জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও গাবতলী উপজেলায় প্রচুর পরিমানে লাল মরিচ, সবজি, ফুল, ধান ও পাটের চাষ হয়ে থাকে। এই পণ্যগুলো পরিবহনে সেতুটি বিশেষ ভূমিকা রখে যাচ্ছে। সেতুটি এলাকার অর্থনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করে দিয়েছে। সেতু হয়ে চলাচলের এক পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। ভারী যানবহন চলাচলে সেতুটি দুলতে থাকতো। এছাড়া সেতুর রেলিং নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। সেতুর নিচের কলামে নোনা ধরে ক্ষয়ে যেতে থাকে। সে কারণে সেতুটি ২০১৮ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এর পর থেকে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ভারী যানবাহন চলাচল করে ৫ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে। ভারী যানবাহন চলাচলে অন্য সড়ক ব্যবহার হলেও রয়েছে নানা দুর্ভোগ। সেই সব সরু পথে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়। এবার সেতুটি নির্মাণ হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দূর হবে।
বগুড়া শহরের চলাচলকারি শহিদুল ইসলাম জানান, ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে পূর্ব বগুড়া থেকে বগুড়া জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি চলাচল করতে ব্যহত হচ্ছে। কয়েক কিলোমিটার ঘুরে চলাচলের ক্ষেত্রে ভারী যানবাহনের নানা দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
ফতেহ আলী সেতু পাড়ের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল কাফি জানান, সড়ক ও জনপথ থেকে সেতুটির দুই পাশে খুঁটি দিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছে। এতে করে শুধু রিক্সা ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারে। সিএনজি পারাপারে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়। সে ক্ষেত্রে ঘুরে আসবার পথটিও সরু। সে পথে ভারী যানবাহন ও অন্যান্য বাস চলাচলের কারণে যানজটেরও সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়। সেতুটি নির্মাণ হলে সব ধরণের যানবাহন চলাচল করবে। এতে করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
বগুড়া জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সেতুটি নির্মাণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ অনুমোদন লাভ করে। এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি টাকা। সেতুটি নির্মাণ করা হলে ভারী যানবাহন চলাচলে সহজ হবে। এই সেতু লম্বায় হবে ৬৮ ফুট। সেতুটির মোট চওড়া হবে ৪০ ফুট। এরমধ্যে সেতুর দুই পাশে ৮ ফুট করে ফুটপাত হবে। যে পথ দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচল করবে। আর মাঝের ২৪ ফুট দিয়ে ভারীসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করবে। সেতুটির নকশা তৈরী করে মন্ত্রণালয়ে জমা হলে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সেতুটির নকশা ও অর্থ বরাদ্দ প্রদান করেছে।
বগুড়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান, ২০২১ অর্থ বছরে শেষে সেতুটি নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়। পিএনপি সেতু কর্মসূচি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৩১ জুলাই ২০২২ তারিখে অনুমোদন করেন। সেই প্রেক্ষিতে পরে প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাস হয়। বগুড়াবাসীর জন্য অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ সেতু। এই সেতুটি হবে দৃষ্টি নন্দন। সাধারণ মানুষের জন্য আনন্দের যোগানও দেবে। সেতুটির আশপাশে নদী পাড় বাঁধাই করা হবে। যেন সেতুটি দীর্ঘদিন টেকসই হয়। সেতু নির্মাণকালে বর্তমান সেতুর পাশ দিয়ে একটি পায়ে চলার সড়ক নির্মাণ করা হবে। যেন আপাতত সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় যোগযোগ করতে পারে। আগামী ১৬ জানুয়ারি সেতুটি নির্মাণ কাজের দরপত্র উন্মুক্ত করা হবে। দরপত্র মূল্যায়ন করে সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। ঠিকাদার নিয়োগের পর এই অর্থ বছরেই কাজটি শুরু হয়ে শেষ হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল